ভূমিকম্পে পরিবারের ১৯ জনকে হারিয়েছেন আফগান নারী

গত দুই দশকের মধ্যে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি আফগানিস্তানের মানুষ
ছবি: এএফপি

‘বিকট শব্দ। তারপর আমার বিছানা কাঁপতে শুরু করল। ভেঙে পড়ল ছাদ। আটকা পড়লেও ধ্বংসস্তূপের ফাঁক দিয়ে আকাশটা দেখতে পারছিলাম। কাঁধের হাড় ভেঙেছে, মাথায়ও আঘাত পেয়েছিলাম। এর মধ্যেও কোনোমতে বের হতে পেরেছি।’

আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানের একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিবিসিকে কথাগুলো বলছিলেন শাবির। গতকাল বুধবার ভোরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেদিন ভোরে যখন ভূমিকম্পে সবকিছু কেঁপে উঠেছিল তখন শাবিরের কক্ষে ছিলেন পরিবারের আরও সাত থেকে নয়জন সদস্য। তাঁদের কেউই বেঁচে নেই বলেই ধরে নিয়েছেন তিনি। মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে জীবনটা আরও নির্মম হয়ে পড়েছে আরেক আফগান নারীর। ভূমিকম্পে পরিবারের ১৯ জনকে হারিয়েছেন তিনি।

গত বছরের আগস্টে তালেবান সরকার ক্ষমতায় বসার পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই নড়বড়ে। যোগাযোগব্যবস্থাও তেমন ভালো না। ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। উদ্ধারকারীদের ঘটনাস্থলে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকাগুলোতে যেতে পারছি না। যোগাযোগব্যবস্থা খুবই দুর্বল।’

ওই নারীও হাসপাতালের বিছানায় আটকা। সাংবাদিকদের তিনি বলছিলেন, ‘বাড়ির একটি কক্ষে সাতজন, আরেকটিতে পাঁচজন ছিলেন। অপর দুই কক্ষে ছিলেন চার ও তিনজন করে। আমার পরিবারের এই মানুষগুলো সবাই মারা গেছে।’

গত দুই দশকের মধ্যে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি আফগানিস্তানের মানুষ। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজারের বেশি মানুষের। আহত প্রায় ১ হাজার ৫০০। কতজন যে ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ১ মাত্রার এ ভূমিকম্পের তীব্রতায় কেঁপেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলও।

গত বছরের আগস্টে তালেবান সরকার ক্ষমতায় বসার পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই নড়বড়ে। যোগাযোগব্যবস্থাও তেমন ভালো না। ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। উদ্ধারকারীদের ঘটনাস্থলে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকাগুলোতে যেতে পারছি না। যোগাযোগব্যবস্থা খুবই দুর্বল।’

এর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আশপাশের এলাকা থেকে উদ্ধারকারীদের ঘটনাস্থলে যেতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনই একজন উদ্ধারকারী ‘সেভ আফগান ফ্রম হাঙ্গার’ নামের একটি এনজিওর কর্মী ওবায়দুল্লাহ বাহের।

আবহাওয়া নিয়ে যেসব সমস্যায় পড়েছেন, তা নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলছিলেন ওবায়দুল্লাহ। বলেন, ‘জুন মাসে আবহাওয়া এমন থাকার কথা না। আমরা শিলাবৃষ্টি ও তুষারপাতের কবলে পড়েছি। এতে সবকিছু আরও জটিল হয়েছে। গত ২০ বছরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে রাস্তাঘাটগুলোরও তেমন উন্নতি হয়নি। দেখাই যাচ্ছে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আশা করছি আমরা উদ্ধারে নামতে পারব।’

ভূমিকম্পে মোবাইল টাওয়ারগুলোর ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘অনেক লোকজন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কেমন আছেন, তার খোঁজ নিতে পারছেন না। কারণ, মুঠোফোন কাজ করছে না। ভূমিকম্পে আমার ভাই ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে। এ খবর আমি জানতে পেরেছি বেশ কয়েক ঘণ্টা পর।’

আরও পড়ুন

পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চেয়েছে তালেবান সরকার। আবদুল ক্বাহার বালখি নামের তালেবান সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তো বলেই দিয়েছেন, মানুষের যে পরিমাণ সহায়তা প্রয়োজন, তা দেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই সরকারের।

এসবের মধ্যে সহায়তার আশ্বাস এসেছে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আফগানিস্তনের মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা তৎপর। এমনকি ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় ওষুধ, খাবার, স্বাস্থ্যকর্মী, জরুরি আশ্রয় সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

এসব সহায়তা কীভাবে কবলিত এলাকায় পৌঁছাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাকতিকার তথ্যবিষয়ক প্রধান মোহাম্মদ আমিন হুজাইফা। এএফপিকে তিনি বলেন, গতকাল বুধবার রাতে অনেক এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে বন্যা দেখা দিয়েছে। এটা উদ্ধারকারীদের কঠিন সমস্যার মধ্যে ফেলবে।

আফগানিস্তানে ভূমিকম্প বিরল কোনো ঘটনা নয়। গত জানুয়ারিতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে পরপর কয়েকটি ভূমিকম্পে ২০ জনের বেশি নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে প্রতিবছর এই দুর্যোগে গড়ে মারা গেছে ৫৬০ জন।

আরও পড়ুন