মারিয়া রেসার নোবেল জয়, প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মুখে কুলুপ

শান্তিতে নোবেলজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে

ফিলিপাইনের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট র‌্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মারিয়া রেসাকে এ বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করার পর এক দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজ শনিবার রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। নিশ্চুপ তাঁর মুখপাত্র ও রাজনৈতিক মিত্ররাও। যদিও মারিয়ার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সাংবাদিকেরাসহ দেশটির জনগণ। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় অনবদ্য লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ শুক্রবার যে দুই সাংবাদিক  শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, তাঁদেরই একজন মারিয়া রেসা (৫৮)। রদ্রিগো দুতার্তে সরকারের রোষানল উপেক্ষা করে স্বাধীন সাংবাদিকতা চালিয়ে গেছেন তিনি। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অপর সাংবাদিক রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ (৫৯)।

ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন করে দুতার্ত সরকারের নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণের শিকার হয়ে চলেছেন দেশটির অনেক সাংবাদিক। মারিয়া এসব নির্যাতিত সাংবাদিকের একজন প্রতিনিধি। স্বাভাবিকভাবে তাঁর বিরাট সাফল্যে দারুণ খুশি সহকর্মীরা। তাঁরা প্রশংসার জোয়ারে ভাসাচ্ছেন তাঁকে।

শান্তিতে নিজ দেশের নাগরিক নোবেল জিতলেও দুর্তাতের নীরবতায় বিস্মিত অনেকে। ২০১৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী ম্যানুয়েল মোগাতো তাঁদের মধে৵ একজন। তাই তো কিছুটা ব্যঙ্গ করেই টুইটে লিখেছেন তিনি, ধন্যবাদ রদ্রিগো দুতার্তে। তিনি লেখেন, বিশ্বের মানচিত্রে ফিলিপাইনকে স্থান করে নেওয়াকে প্রকৃতই আপনি সম্ভব করে তুলেছেন। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের লড়াইয়ের জন্য মারিয়া রেসা ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

দুতার্তের মাদকবিরোধী লড়াইয়ের ওপর প্রতিবেদন করে পুরস্কার জিতেছেন মোগাতো। দুতার্তেকে নিয়ে তাঁর একটি মন্তব্য ছিল—দুতার্তে ও রাশিয়ার শক্তিমান মানব ভ্লাদিমির পুতিন দুই ‘রক্তসম্পর্কিত ভাই’।

দুতার্তে সরকারের শুধু একজন কর্মকর্তাই এখন পর্যন্ত মারিয়ার নোবেল পুরস্কার জেতা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সাবেক সাংবাদিক ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিওদোরো লকসিন বলেছেন, অভিনন্দন, মারিয়া। জয় জয়ই।

যে সাহসী সাংবাদিকতার কারণে মারিয়ার জয়, তা নিয়ে অবশ্য লকসিন কোনো মন্তব্য করেননি। বরং ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন অ্যাকুইনো শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েও কীভাবে পরে তা পাননি সেই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তাঁর পরাজয়কে ‘বিস্ময়ের’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মারিয়ার অভূতপূর্ব সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছে ফিলিপাইনে সাংবাদিকদের সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস অব দ্য ফিলিপাইনস। সংগঠনটি বলেছে, এই পুরস্কার শুধু তাঁদের কাজের স্বীকৃতি নয়, বরং তা ফিলিপাইন ও বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।

ফিলিপাইনের নাগরিক হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রথম জিতলেন মারিয়া রেসা। সিএনএনের ফিলিপাইনের ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে তিনি র‌্যাপলার প্রতিষ্ঠা করেন। ফিলিপাইনে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে শত শত মানুষকে হত্যা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় র‌্যাপলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপাইনে পাচার করার বিষয়েও কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করে র‌্যাপলার।

যে কয়টি সংবাদমাধ্যম ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে ও তাঁর নীতির খোলাখুলি সমালোচনা করে, সেগুলোর মধ্যে র‌্যাপলার অন্যতম। এ জন্য র‌্যাপলারের প্রধান মারিয়াকে সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গত বছর ফিলিপাইনের সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইনে একটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। স্বাধীন সাংবাদিকতা করার জন্য তাঁকে একাধিকবার জেলে যেতে হয়েছে।

মারিয়া ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। নোবেল পুরস্কার জয়ের পর মারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিএনএনকে বলেন, সত্য প্রকাশ ও আইনের শাসনের জন্য তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।