আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে, চীনা কর্মকর্তারা ২০১৯ সালে স্বল্পমেয়াদি, বিচারবহির্ভূত বন্দিশিবির বন্ধ করার ঘোষণা করে। এসব বন্দিশিবেরে উইঘুরদের কোনোও অভিযোগ ছাড়াই রাখা হয়। এসব বন্দিশিবেরে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগে হাজারো উইঘুর এখনো বছরের পর বছর বন্দী আছেন।
নরওয়েতে নির্বাসিত উইঘুর ভাষাবিদ আবদুওয়েলি আয়ুপ বন্দীদের তালিকা গণমাধ্যমে পাঠান। উইঘুরদের সঙ্গে সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে তালিকায় থাকা ১৯৪ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে আমেরিকার গণমাধ্যমগুলো। পাশাপাশি আইনি নোটিশ, চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনকলের রেকর্ড এবং ঠিকানা, জন্মদিন ও পরিচয় নম্বর চেক করেছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। এ তালিকায় হত্যা বা চুরির মতো সাধারণ ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে সন্ত্রাস, ধর্মীয় চরমপন্থা বা রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অস্পষ্ট অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধের ওপর দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।
জিনজিয়াংয়ের কোনাশেহের কাউন্টি এলাকাটি গ্রাম। এখানে ২ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের বাস। এখানে ২০১৭ সালের পর থেকে বেশি ধড়পাকড় শুরু হয়। ধরার পরই কারাগারে রাখা হয়। এখানকার কারাগারে আছে নারী, পুরুষ, যুবক ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। এক জায়গায় তাঁদের সবার মধ্যে একটা মিল রয়েছে—এরা সবাই ইউঘুর। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের কারাবাস হয় আমেরিকায়। তবে জিনজিয়াংয়ের কোনাশেহের এলাকার কারাগারে আমেরিকার চেয়ে ১০ গুণ বেশি মানুষ আছেন। এটি সামগ্রিকভাবে চীনের অন্য এলাকার তুলনায় ৩০ গুণ বেশি বড় কারাগার।
জিনজিয়াংয়ে স্থানীয় আইন পরিবর্তন করে শিক্ষা শিবিরের ‘চরমপন্থী মতাদর্শিক শিক্ষা’ বাস্তবায়নের অনুমতি অনেক আগেই দিয়েছে চীন। বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব শিবিরে বন্দীদের মান্দারিন ভাষা শিখতে বাধ্য করা হয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসার কথা বলা এবং তাদের সঠিক আচরণ পরিচালনার নিয়মগুলো কঠোরভাবে মনে রাখতে বাধ্য করা হয়।
এ অভ্যাসগুলোর অংশ হিসেবে চীন সরকার সাংঘর্ষিকভাবে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সংস্কৃতি ও জাতিগত সত্তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই শিক্ষা শিবিরের পাশাপাশি উইঘুর শিশুদের ক্যাম্প ও স্কুল রয়েছে, যেখানে তাদের পরিবার, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা