সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করবেন সি

কংগ্রেসে ভাষণরত সি চিন পিং।
ছবি: এএফপি

সামরিক শক্তিতে চীনের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া করোনা মহামারিসহ প্রজন্মগত পরিবর্তনের বিষয়টিকে সামাল দেওয়া চীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই সামনে এগোতে চান চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চীনের রাজধানী বেইজিং শহরে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস শুরু হয়েছে গতকাল। সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি দেশটির সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। এ ছাড়া দেশটিতে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর কোভিড নীতি বজায় রাখা ও তাইওয়ানকে একীভূত করতে প্রয়োজনে শক্তি খাটানোর কথা বলেছেন সি।

তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে সি বলেন, শান্তিপূর্ণ অথবা বলপ্রয়োগে পুনর্মিলন ঘটানো হবে।

দুই দিনের কংগ্রেস উপলক্ষে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ২ হাজার ২৯৬ জন আইনপ্রণেতা বেইজিংয়ে জড়ো হয়েছেন। কংগ্রেস চলাকালে বেইজিংয়ে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বায়ুর মান ঠিক রাখতে পাশের হেবেই প্রদেশের ইস্পাত কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

এবার ২০তম কংগ্রেসে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ধারাবাহিকতা, প্রজন্মগত পরিবর্তনের দিকে নজর দিচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। দলটির নেতারা এবার চীনের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি নিয়েও আলোচনা করবেন। পাশাপাশি চীনের পরবর্তী নেতা নির্বাচিত করবেন। সম্ভবত এবারও তৃতীয় মেয়াদে ৬৯ বছর বয়সী সি চিন পিং ক্ষমতায় আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি মাও সে-তুংয়ের পর দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে নিজের জায়গা পোক্ত করবেন।

আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের সম্ভাবনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে প্রয়োজন পড়লে শক্তি প্রয়োগেও পিছপা হব না। প্রয়োজনে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সি চিন পিং, প্রেসিডেন্ট, চীন

দীর্ঘ সময়ের উদ্বোধনী ভাষণে গতকাল সি তাঁর গত পাঁচ বছরের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, দলটি তার আধুনিকীকরণের লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট থাকবে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্বমানের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা। নতুন উন্নয়নের পদ্ধতির আলোকে উচ্চমানের উন্নয়ন সাধন করবে চীন। তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়তে উচ্চমানের উন্নয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সব ক্ষেত্রে নতুন উন্নয়ন দর্শনকে সম্পূর্ণভাবে ও বিশ্বস্তভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির বিকাশের জন্য সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে।’ ভাষণে সি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় চীনের জিরো কোভিড–নীতির পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, চীনের কোভিড–নীতি অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

তাইওয়ান ইস্যুতেও কথা বলেছেন সি। তিনি স্বশাসিত অঞ্চলটিকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করেছেন। তাইওয়ান প্রসঙ্গে সি বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যুর সমাধান চীন একাই করবে। তিনি এ ক্ষেত্রে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের নিন্দা জানান। সি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের সম্ভাবনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে প্রয়োজন পড়লে শক্তি প্রয়োগেও পিছপা হব না। প্রয়োজনে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ হংকংয়ে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়েও তিনি ভাষণে জানিয়েছেন। সি তাঁর এবারের ভাষণে ‘সুরক্ষা’ ও ‘নিরাপত্তা’ শব্দ দুটি ৭৩ বার উচ্চারণ করেছেন। এর আগে ২০১৭ সালের সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ শব্দ দুটি ৫৫ বার বলেছিলেন।

এবারের সম্মেলনে কংগ্রেস সিকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক, চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী পদ এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে পুনরায় নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে আগামী বছরের মার্চে চীনের পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশনে আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। অবশ্য কংগ্রেসের এ অনুষ্ঠান আগেভাগেই সবকিছু পরিকল্পনা করে রাখা। তবে এ আয়োজনের বেশির ভাগই অনুষ্ঠিত হবে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের মাধ্যমে। কংগ্রেস প্রতিনিধিরা প্রথমে বাছাই করবেন কেন্দ্রীয় কমিটির ২০৪ সদস্য। এই সদস্যরা পরে নির্বাচিত করবেন ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরো। এটাকেই চীনের মন্ত্রিসভা বলা যায়। এরাই ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টির সাধারণ সম্পাদক তথা সর্বোচ্চ নেতাও নির্বাচিত করে। সি সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে থেকে গেলে পলিটব্যুরোর ২৫ জন তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ৭ জন উপদেষ্টাও বাছাই করবেন। যাকে বলা হয় ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি’। এসব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ২০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিশনেরও প্রভাব থাকে। এই কমিশন, পলিটব্যুরো ও স্ট্যান্ডিং কমিটি মিলে ১৪১ কোটি মানুষকে আগামী পাঁচ বছর পরিচালনা ও শাসন করবে। আগামী শনিবার কংগ্রেস শেষ হওয়ার পর সি তাঁর স্ট্যান্ডিং কমিটির নাম ঘোষণা করবেন। এবার প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াংয়ের জায়গায় নতুন কাউকে বসাতে পারেন সি। কেছিয়াং তাঁর দুই মেয়াদ পূর্ণ করেছেন।

তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেসের উদ্বোধনীতে সির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাইওয়ান। গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়, সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তাইওয়ান কখনো পিছপা হবে না। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিয়ে আপস করবে না। তাইওয়ানবাসী স্পষ্টভাবে বেইজিংয়ের এক দেশ, দুই সিস্টেমের বিরোধিতা করবে।

তাইওয়ানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তাইওয়ান প্রণালি এবং এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা উভয় পক্ষের দায়িত্ব এবং সেখানে যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি কোনো বিকল্প হতে পারে না। উল্লেখ্য, গত পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে এ অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়ায়। তাইওয়ান ঘিরে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় চীন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন