টিভি উপস্থাপিকার সঙ্গে সম্পর্কের জেরে কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হলো কিন গ্যাংকে
কিন গ্যাং—চীনের রাজনীতিতে উদীয়মান এক নক্ষত্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সি চিন পিং সরকারে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি তিনি। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই উদীয়মান নক্ষত্র যেন আকাশ থেকে খসে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে সরিয়ে দিয়ে ওয়াং ই-কে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি এত দিন চীনের শীর্ষ কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন কিন গ্যাং। বছর না ঘুরতে তাঁর চাকরি হারানোর ঘটনা বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলেছে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন গ্যাং কার্যত নিখোঁজ। মাসখানেক ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। কোথাও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর।
আকস্মিক কিন গ্যাংয়ের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ খোয়ানোর বিষয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি। এর আগে চীনের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একবার বলা হয়েছিল, ‘শারীরিক কারণে’ কিন গ্যাং জনসমক্ষে আসতে পারছেন না। আসলে কি তা–ই? তাহলে কেন তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো? তাহলে কি অন্যকিছু। এমন কী তাঁর অপরাধ, কেনই–বা বর্ণাঢ্য পেশাজীবনের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় এমন পরিণতি—এসব নিয়েই এখন চলছে গুঞ্জন। গুঞ্জন রয়েছে, এক নারী টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে পদ খুইয়েছেন কিন গ্যাং।
যদিও এই গুঞ্জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, অকাট্য প্রমাণ নেই। যে নারীকে ঘিরে কিন গ্যাংয়ের সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন। এমন গুঞ্জনের পর তিনিও হঠাৎ ‘অদৃশ্য’ হয়ে গেছেন। ফলে গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্পর্ক ও নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চীনের বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, কিন গ্যাংয়ের এমন কর্মকাণ্ডকে কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা গুরুতর নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে উপস্থাপন করছেন। মওকা মতো তাঁরা কথিত নৈতিক অবক্ষয়ের ইস্যুটি ব্যবহার করেছেন। তাই কিন গ্যাংয়ের ওপর শাস্তির খড়্গ নেমে এসেছে।
বলা হচ্ছে, নারী টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে কিন গ্যাং কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি। কিন্তু এমন কর্মকাণ্ড রাজনীতিতে শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পারেন ৫৭ বছর বয়সী কিন গ্যাং। এসব কারণের কোনোটিই যেমন স্বীকার করে নেওয়া সম্ভব নয়, তেমনি খারিজ করার উপায়ও থাকে না।
অবাক করা বিষয় হলো, চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্রের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন কিন গ্যাং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি ওয়াশিংটনে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এরপর তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। সি চিন পিংয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
বিশ্লেষকদের অনেকেই কিন গ্যাংয়ের নাটকীয় উত্থানের দিকে নজর রাখছিলেন। কিন গ্যাং কত দ্রুত একজন ‘উলফ ওয়ারিয়র’ বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটাই ছিল দেখার বিষয়। চীনের একদল কূটনীতিককে ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ বলা হয়। তাঁরা চীনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব। সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কিন গ্যাং দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আগে যুক্তরাজ্যেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন গ্যাংয়ের। তিনি সাবলীল ইংরেজি বলতে পারেন। ব্যক্তিজীবনে একজন ক্রীড়া অনুরাগী হিসেবে তিনি পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে এনবিএ গেমসে তাঁকে শট নিতে দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যে থাকাকালে আর্সেনালকে সমর্থন করতেন তিনি।
কমিউনিস্ট পার্টির কিছু মানুষ হয়তো ভাবতেন, ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হওয়ার জন্য এমন ব্যক্তি যোগ্য নন। তাই শুধু পদচ্যুত নয়, বরং চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে কিন গ্যাংয়ের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। একজন উদীয়মান নক্ষত্র থেকে পূর্ণাঙ্গ আলো ছড়ানোর আগেই খসে পড়লেন তিনি।