জাতিসংঘে ঢুকে মানুষকে ডাইনোসর বলছে, ‘বিলুপ্তির দিকে যেয়ো না’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলছে। হঠাৎ সেখানে হুড়মুড় করে পা দাপাতে দাপাতে ঢুকে পড়ে এক অতিকায় ডাইনোসর। তার এমন আকস্মিক আবির্ভাবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উপস্থিত সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ডাইনোসরটি সোজা অধিবেশনকক্ষের ডায়াসে উঠে পড়ে। তারপর সবার উদ্দেশে বক্তব্য রাখে। সে বলে, বিলুপ্তির দিকে যেয়ো না।
জলবায়ু বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য এটি। ইউএনডিপির ‘ডোন্ট চুজ এক্সটিঙ্কশন’ বা ‘বিলুপ্তির দিকে যেয়ো না’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ–২৬) প্রাক্কালে এটি প্রচার করা হচ্ছে।
চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি ডাইনোসর, যার নাম ‘ফ্রাঙ্ক দ্য ডাইনো’।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের ফেসবুক-টুইটারেও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। তার ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ে ফ্রাঙ্ক ডাইনো এবার মানুষের মুখোমুখি। তার মতে, অজুহাত দেওয়ার মতো সময়ও আমাদের হাতে নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডাইনোসরের মতো আমরাও বিলুপ্তির পথে। এখনই সময়, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করার। তাই আসুন, বিলুপ্তির দিকে না গিয়ে ফ্রাঙ্ক ডাইনোর (@FrankTheDino) সঙ্গে আমরা ক্লাইমেট অ্যাকশনের (#ClimateAction) দিকে যাই।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকক্ষের যে ডায়াসে দাঁড়িয়ে বিশ্বনেতারা ভাষণ দেন, ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে ফ্রাঙ্ক ডাইনোকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিতে।
ফ্রাঙ্ক ডাইনো বলে, ‘তোমরা শোনো সবাই। বিলুপ্তির ব্যাপারে আমি মোটামুটি জানি। যদি এটা সহজে বোঝা উচিত, তা–ও বলছি। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াটা খুবই কষ্টের। আর নিজেরাই নিজেদের বিলুপ্ত করে ফেলা ৭ কোটি বছরে এমন অদ্ভুত কথা আমি কখনো শুনিনি। আমাদের সময় তো উল্কাপিণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তোমাদের অজুহাতটা কী? তোমরা এগিয়ে যাচ্ছ জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে। কিন্তু এরপরও প্রতিবছর জীবাশ্ম জ্বালানির পেছনে সরকারগুলো জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। ভাবো তো কেমন হতো, যদি আমরা প্রতিবছর উল্কাপিণ্ডের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করতাম। এখন তোমরা তো ঠিক তা–ই করছ। ভেবে দেখো, এই টাকা দিয়ে আরও কত কিছু করা যেত। কত মানুষ পৃথিবীতে অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আমি বুঝি না, নিজেদের বিলুপ্ত করার পেছনে টাকা খরচ করার থেকে তোমাদের কি মনে হয় না তাদের সাহায্য করলে ভালো হতো!’
ফ্রাঙ্ক ডাইনো আরও বলে, ‘কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমি কী বলছি, মন দিয়ে শোনো। তোমাদের সামনে এখন অনেক বড় সম্ভাবনা। তোমরা মহামারি থেকে উঠে আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে। মানুষ মানুষের জন্য প্রমাণ করার এখনই সময়। তাই আমি তোমাদের একটা ভালো বুদ্ধি দিই। বিলুপ্তির দিকে যেয়ো না। বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই নিজেদের বাঁচাও। খামাখা অজুহাত না দেখিয়ে, মানুষকে বিপদে না ফেলে, অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ শুরু করো। ধন্যবাদ।’
ফ্রাঙ্ক ডাইনোর বক্তব্য শেষ হতেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দেন। এভাবে দর্শকেরা সবাই ফ্রাঙ্ক ডাইনোর বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
চলচ্চিত্রটির শেষে পর্দায় একটি বার্তা দেওয়া হয়, ‘এখন না হলে কখনোই নয়। বিলুপ্তির দিকে যেয়ো না।’