পুতিন কীভাবে অর্থনৈতিক সংকট সামলে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনফাইল ছবি: রয়টার্স

সংকটের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি, বাজেট–ঘাটতিসহ দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। কমে যাচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর কারণ হিসেবে একদিকে যেমন রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, অপর দিকে রয়েছে যুদ্ধ চালাতে বিপুল ব্যয়। এরপরও শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাজি হবেন বলে মনে হচ্ছে না।

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পরও বর্তমান গতিতে আরও বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক মারিয়া স্নেগোভায়া বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে আঘাত এসেছে, তা বিপর্যয়কর নয়। এটি এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের জন্য মানিয়ে নেওয়া সম্ভব।

একই কথা গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক রিচার্ড কনোলির। তিনি বলেন, ‘যত দিন রাশিয়া জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে পারবে এবং মানানসই একটি দামে তা বিক্রি করতে পারবে, তত দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটির হাতে যথেষ্ট অর্থ থাকবে। যদিও রাশিয়ার অর্থনীতির বর্তমানে যে অবস্থা, তা দেশটির জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়।’

ইতিহাসের দিকে তাকালে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে রাশিয়াকে প্রতিকূল চুক্তি করতে দেখা যায় বলে উল্লেখ করেন গবেষক স্নেগোভায়া। যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও আফগানিস্তান যুদ্ধের পর। তিনি বলেন, তবে রাশিয়া এখনো সেই পর্যায়ের সংকটের মধ্যে পড়েনি। এটা ইউক্রেনের জন্য খারাপ একটি খবর, এমনকি যুদ্ধ থামানোর জন্য তৎপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্যও।

আরও পড়ুন
এম৭৭৭ হোইৎজার কামান থেকে গোলা ছুড়ছেন ইউক্রেনের সেনারা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্যমতে, এ বছর রাশিয়ার মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। আর এ মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব বলেছিলেন, যুদ্ধ চালাতে জাতীয় বাজেটের ৪০ শতাংশ খরচ করছে মস্কো। ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে রুশ সেনাদের সবচেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষক রিচার্ড কনোলি।

এ ছাড়া যুদ্ধ হতাহত সেনাদের পরিবারগুলোকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে রুশ সরকার। এর লক্ষ্য হতাহত নিয়ে রাশিয়ার ভেতরে ক্ষোভ কমানো। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গত জুনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রায় ১০ লাখ জন হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার জন নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের হিসাবে, যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার জাতীয় কল্যাণ তহবিলের আকার ৫৭ শতাংশ কমেছে। সম্প্রতি রাশিয়ার বড় তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান লুকঅয়েল ও রসনেফটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এতে রাশিয়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে বলে জানান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের কিম্বারলি ডোনোভ্যান।

এই গবেষক বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার বড় বড় তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকা ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তেল রপ্তানি করছে। এতে করে খরচ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যদি তাদের মস্কো থেকে তেল কেনা বন্ধ করা যায়, তাহলে যুদ্ধের মোড় বদলে যেতে পারে। তখন একটি সমঝোতায় রাজি হওয়া ছাড়া পুতিনের সামনে হয়তো খুব কম পথই খোলা থাকবে।

আরও পড়ুন