জার্মানিতে এই মুহূর্তে শরণার্থী অনেক বেশি: ওলাফ শলৎজ

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ দেশের রাজ্যগুলোকে শরণার্থী মোকাবিলায় সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি চালু করেছে বার্লিন।

শনিবার জার্মান ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক রেডাকসিওননেটভের্ক ডয়চেল্যান্ডে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জার্মান চ্যান্সেলর বলেছেন, বার্লিন কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন আটকাতে চায়।

জার্মানিতে অভিবাসন নীতি নিয়ে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি পোল্যান্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে ভিসা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসার বিনিময়ে কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু ওয়ারশ থেকে আসা ব্যাখ্যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সন্তুষ্ট নয়। এরপরই শলৎজের এ মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।

চ্যান্সেলর বলেন, ‘এই মুহূর্তে জার্মানিতে আসতে চাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ৭০ শতাংশেরও বেশি শরণার্থীর আগে কোনো নিবন্ধন হয়নি। তারা প্রায় সবাই ইইউয়ের অন্যান্য দেশে ছিল।’

ওলাফ শলৎজ জার্মানির সব রাজ্যে পৌরসভাগুলোর জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা শুরু করতে চান। তিনি বলেন, নভেম্বরে জার্মান রাজ্যগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা আছে। তখন তিনি ‘ফ্লেক্সিবল ক্যাপ’ নিয়ে আলোচনা করবেন। যাতে শরণার্থীদের আশ্রয়সংখ্যার ভিত্তিতে রাজ্যগুলোকে অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়া যায়।
জার্মান চ্যান্সেলরের ভাষ্য, বার্লিন ওয়ারশকে নিশ্চিত করতে বলেছে, শরণার্থীদের কাছে সহজে জার্মানি আসার ভিসা যেন বিক্রি করা না হয়।

শরণার্থী নিয়ে জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে কখনো কখনো প্রকাশ্য বিরোধ দেখা গেছে। এরপরও শলৎজ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার বিষয়ে এই সরকার সম্পূর্ণ চুক্তিবদ্ধ। এটি শুধু সংহতির মাধ্যমে করা যেতে পারে। জার্মানি সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

বার্লিন সম্প্রতি প্রতিবেশী পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সীমান্ত নজরদারির ঘোষণা করেছে। তিনটি দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে শেনজেন ভিসা এলাকার অংশ। শেনজেন ভিসার মাধ্যমে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় অবারিতভাবে ভ্রমণ করা যায়।

ইতিমধ্যে ইতালির ছোট দ্বীপ লাম্পেদুসায় হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আগমন অভিবাসন এবং আশ্রয়–সংক্রান্ত একটি সংশোধিত চুক্তি নিয়ে কথা চলছে। এ পরিস্থিতিতে জার্মানি ঘোষণা করেছে, অভিবাসী বণ্টনের লক্ষ্যে ইইউব্যাপী অভিবাসন–সংক্রান্ত নিয়ম নিয়ে তারা একমত। এই ইস্যুতে আপস করতে তারা প্রস্তুত।

শলৎজের ওপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে। কারণ, রক্ষণশীল ও অভিবাসীবিরোধী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আরও পড়ুন

২০২৩ সালে জার্মানিতে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার শরণার্থী আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। তবে তাঁদের মধ্যে ইউক্রেনের নাগরিকেরা নেই। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর জার্মানি ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালে গৃহযুদ্ধের কারণে লাখো মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে অভিবাসী সংকটের সময় জার্মানিতে ১০ লাখ শরণার্থী এসেছিলেন।

জার্মান সরকার প্রায় ২০ লাখ শূন্যপদ পূরণের জন্য অভিবাসীদের আনতে চায়। গত জুনে ‘স্কিলড ওয়ার্ক ইমিগ্রেশন ল’ আইনটি সংস্কারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন জার্মান আইনপ্রণেতারা।

আরও পড়ুন