জার্মানিতে তথাকথিত রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনারী কারা

অভ্যুত্থানের চেষ্টায় জড়িত থাকায় সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
ছবি: রয়টার্স

জার্মানিতে তথাকথিত অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযানে নামে। এ সময় অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার সন্দেহে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজও সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে বলে জার্মান সুরক্ষা আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ‘রাইখবুর্গার’ বা রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট নামে রক্ষণশীল ডানপন্থী দলটি জড়িত বলে জানা গেছে। দলটি জার্মানিতে একটি ছোট সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত। আপাতদৃষ্টে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মতো শক্তিমত্তা তাদের নেই বললেই চলে।

রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট গোষ্ঠী ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি বা গণপ্রজাতন্ত্রী জার্মানির অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। এ ছাড়া রাষ্ট্র ও তার আইনি ব্যবস্থাকেও প্রত্যাখ্যান করে তারা। এই গোষ্ঠী তথাকথিত জার্মান রাইখ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের মতাদর্শ হলো গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান ও রাজতন্ত্রই আদর্শিক উপাদান। এই গোষ্ঠী বহুত্ববাদী সমাজকে প্রত্যাখ্যান করার মনোভাব পোষণ করে।

১৯৮০–এর দশকে জার্মানিতে রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট গোষ্ঠীর আবির্ভাব। ২০১৩ সাল থেকে গোষ্ঠীটি নানান হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজার ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত করেছেন গোষ্ঠীর সদস্যরা।

অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালায় পুলিশ।
ছবি: রয়টার্স

জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কথিত অভ্যুত্থানের মূল হোতা দুজন। তাঁরা হলেন ৭১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যিনি যুবরাজ রিয়েস বা স্বঘোষিত হাইনরিশ ত্রয়োদশ নামে পরিচিত এবং রুডিগার ভন পি নামের একজন সাবেক প্যারাট্রুপার কমান্ডার। এই দুজন মিলে এই কথিত অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। এ কাজে তাঁরা চরম ডানপন্থী নারী ও পুরুষ সহযোগীদের নিয়োগ করেছিলেন। মূলত ২০২১ সালেই জার্মান পার্লামেন্ট (রাইখস্ট্যাগ) হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে এই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।

খবরে বলা হয়, চরমপন্থী গোষ্ঠীতে ৫৮ বছর বয়সী নব্য নাৎসিদের অনুসারী দল (এএফডি) বির্গিট মালস্যাক উইঙ্কম্যান নামের একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্যও আছেন। তিনি বার্লিনে একটি আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা গোষ্ঠীর মধ্যে জার্মান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সাবেক সৈন্য এবং সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন। তাঁরা সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন।

কার্লসরুয়ে শহরে অবস্থিত সংবিধানের সুরক্ষা আদালতের সভাপতি বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দ্রুত জেরা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় এ শহরে আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন

জার্মানির সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, বুধবার ভোররাতে জার্মানির ১১টি রাজ্যে একযোগে ৩ হাজার অপরাধ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বিশেষ পুলিশ বাহিনী (বিকেএ) ১৩০টির বেশি অ্যাপার্টমেন্ট, কার্যালয় ও গুদামকক্ষে তল্লাশি করে। কিছু কিছু স্থানে স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ডও (কেএসকে) তল্লাশিতে যোগ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্মরণকালের জার্মান ইতিহাসে অভূতপর্ব অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টার কথা প্রকাশ হয়েছে।

রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট নামের রক্ষণশীল ডানপন্থীরা পার্লামেন্টে হামলা চালিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। তারা পার্লামেন্ট ভবনে আক্রমণ করে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করার পরিকল্পনা করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা এঁটেছিল বলে জানিয়েছেন জার্মানির সরকারি কৌঁসুলিরা।