নারী হত্যার শাস্তির আলাদা বিধান রেখে ইতালির পার্লামেন্টে বিল পাস

ইতালির পতাকারয়টার্স ফাইল ছবি

ইতালিতে ফেমিসাইড বা নারী হত্যার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র একটি আইন পাস করতে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছেন। আইনে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ফেমিসাইড হলো নারী হওয়ার কারণে কাউকে বিদ্বেষমূলকভাবে নিশানা করে হত্যা করা।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। আর এদিনেই ইতালির পার্লামেন্টে ফেমিসাইড–সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়েছে।

ফেমিসাইড নিয়ে স্বতন্ত্র আইন করার ধারণাটি নিয়ে ইতালিতে আগেও আলোচনা হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে জিউলিয়া চেকেত্তিন নামের এক নারী তাঁর সাবেক প্রেমিকের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার পর এ–সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে ২২ বছর বয়সী জিউলিয়াকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন ফিলিপ্পো তুরেত্তা। এরপর তিনি তাঁর মৃতদেহ ব্যাগে ভরে একটি হ্রদের পাশে ফেলে দেন।

তুরেত্তা ধরা না পড়া পর্যন্ত ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জিউলিয়ার বোন এলেনার করা একটি মন্তব্য বেশ আলোড়ন তোলে। সেটি হলো খুনি কোনো দানব নয়; বরং একটি গভীর পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বেড়ে ওঠা ‘হৃষ্টপুষ্ট সন্তান’। তাঁর এসব কথাই ইতালিজুড়ে হাজারো মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে আনে। তাঁরা পরিবর্তনের দাবি তোলেন।

আরও পড়ুন

অবশেষে ইতালির পার্লামেন্টে দীর্ঘ বিতর্কের পর আইনপ্রণেতারা ফেমিসাইড নিয়ে পৃথক আইন পাসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে নারী হত্যাকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের তালিকায় যুক্ত হলো ইতালি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বিলটি উত্থাপন করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন কট্টর-ডানপন্থী সরকারের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় পার্লামেন্ট সদস্যরাও আইনটিকে সমর্থন জানিয়েছেন। পার্লামেন্ট সদস্যদের অনেকে লাল রিবন বা লাল জ্যাকেট পরে নারীর প্রতি সহিংসতার শিকারদের স্মরণ করেছেন।

এখন থেকে ইতালিতে কোনো নারীকে তাঁর লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে হত্যার শিকার করা হলে, সেটিকে ফেমিসাইড হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

একটি বিশেষজ্ঞ কমিশন সম্প্রতি নারীদের হত্যার ২১১টি ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে। এরপর তারা ফেমিসাইড আইনের খসড়া তৈরি করেছে। ওই বিশেষজ্ঞদের একজন বিচারক পাওলা দা নিকোলা।

আরও পড়ুন

বিচারক নিকোলার মতে, প্রচণ্ড ভালোবাসা বা প্রবল ঈর্ষা থেকে এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটছে বলাটা একধরনের বিকৃতি। এর মধ্য দিয়ে রোমান্টিক বা সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য শব্দ ব্যবহার করে বাস্তবতাকে ঢেকে দেওয়া হয়।

এই বিচারক আরও বলেন, ‘এই আইন প্রণয়ণের অর্থ দাঁড়াবে যে আমরাই ইউরোপে প্রথম অপরাধীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য চিহ্নিত করেছি। আর তা হলো ক্ষমতা ও আধিপত্য।’

এর আগে সাইপ্রাস, মাল্টা ও ক্রোয়েশিয়া তাদের ফৌজদারি বিধিতে ফেমিসাইডের একটি আইনি সংজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এবার ইতালিও সে কাতারে যুক্ত হচ্ছে।