রুশ সেনারা কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বাখমুত শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে প্রায় ছয় মাস পর প্রথম উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখাতে পারবে মস্কো। তবে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়োগ করা নেতার পক্ষ থেকে গতকাল বলা হয়, বাখমুতের পরিস্থিতি এখনো কঠিন। কিয়েভ তাদের সেনা প্রত্যাহার করেনি। এ পরিস্থিতির মধ্যেই কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মস্কো উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তবে ভবিষ্যতে যথাযথ অনুপাতে প্রতিক্রিয়া জানাবে। দুই দেশকে তাই সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সামরিক বাহিনীর প্রধানেরা এক বিরল ফোনালাপ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলেছে, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এসইউ-২৭ ড্রোনটির প্রপেলারে আঘাত করার পর এটি বিধ্বস্ত হয়। এর আগে ড্রোনটির ওপর তেল ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। মস্কো দাবি করেছে, ড্রোনের সঙ্গে যুদ্ধবিমানের সংঘর্ষ হয়নি। বাঁক নিতে গিয়ে ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এটি রুশ আকাশসীমার কাছে যেভাবে উড়ছিল, তা স্পষ্ট উসকানি।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে বলেন, ‘ড্রোনের ওপর হামলার ঘটনাটি পাইলটদের ইচ্ছাকৃত কি না, তা পরিষ্কার নয়। তবে রুশ বাহিনীর বেপরোয়া কার্যক্রমের সঙ্গে এই আচরণের মিল রয়েছে।’
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওতে কৃষ্ণসাগরের যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনটির কাছ দিয়ে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান উড়ে যেতে এবং এর কাছে তেল ঢালতে দেখা যায়।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেন, ‘ক্রিমিয়ার উপকূলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ওড়ানোর ঘটনাটি উসকানি। এতে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া।
ঘটনার পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মস্কো উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তবে ভবিষ্যতে যথাযথ অনুপাতে প্রতিক্রিয়া জানাবে। দুই দেশকে তাই সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে। এর মধ্যে সংকটকালে সামরিক যোগাযোগের পথ খোলা রাখার মতো বিষয়গুলো যুক্ত থাকতে হবে।
শোইগুর সঙ্গে কী ধরনের কথাবার্তা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি অস্টিন। তবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন যেখানে অনুমতি দেবে, সেখানেই তাদের বিমানবাহিনীর কার্যক্রম চালু থাকবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও সামরিক যুদ্ধজাহাজ নিরাপদ ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে চালাতে হবে। অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ঘটনাটি রাশিয়ার অনিচ্ছাকৃত বলে মনে হয়।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি যুক্ত ওয়াশিংটন।
ক্রেমলিনের সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে তারা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না। তবে তারা এ কার্যক্রমে যে সরাসরি যুক্ত, ড্রোনের ঘটনাই তার প্রমাণ।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে কোটি কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তার দেশের সেনারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন না। যদিও মস্কো বলে আসছে, তারা সম্মিলিত পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে। আর কিয়েভের অভিযোগ, ড্রোন বিধ্বস্ত করে মস্কো লড়াইয়ে অন্য দেশকেও টানতে চাইছে।
ভিডিও উন্মুক্ত
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওতে কৃষ্ণসাগরের যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনটির কাছ দিয়ে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান উড়ে যেতে এবং এর কাছে তেল ঢালতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ড্রোনটির ক্ষতি করতে এ ধরনের চেষ্টা চালানো হয়। এরপর আরেকটি যুদ্ধবিমান এর কাছ দিয়ে গেলে ভিডিও বন্ধ হয়ে যায়। পেন্টাগনের অভিযোগ, রুশ যুদ্ধবিমানটির সঙ্গে এ সময় ড্রোনের সংঘর্ষ হয়। এরপর ওই ড্রোনের ক্ষতিগ্রস্ত প্রপেলারের ছবি দেখা যায়। পেন্টাগনের দাবি, প্রপেলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি আর চালানো সম্ভব হয়নি। ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পাদনা করার কথা বলেছে মার্কিন বাহিনী।
ধ্বংসাবশেষ খুঁজবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে বিবিসির এক খবরে বলা হয়, কৃষ্ণসাগরে ভেঙে পড়া মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ খুঁজবে রাশিয়া। বুধবার রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ এসব কথা জানান। নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, ‘আমি জানি না, আমরা শেষ পর্যন্ত এ কাজে সফল হব কি না। তবে আমরা কৃষ্ণসাগরে ভেঙে পড়া মার্কিন ড্রোনটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজব।’
অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) সমন্বয়ক জন কিরবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভেঙে পড়া ড্রোনটি খোঁজা হচ্ছে। যদি রাশিয়াও একই কাজ করে, তাহলে উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় তাদের সেই সক্ষমতা কমিয়ে আনা হবে।
উত্তাল সাগরের চার থেকে পাঁচ হাজার ফুট গভীরে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার প্রক্রিয়াকে ‘অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং’ বলে মন্তব্য করেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর জেনারেল মার্কিন মিলে।