কিয়েভকে সমরাস্ত্র শিল্পের কেন্দ্র করতে চান জেলেনস্কি

কিয়েভে এক ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

ভলোদিমির জেলেনস্কি
ছবি : রয়টার্স

পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্প খাতকে ‘বৃহৎ সমরাস্ত্র শিল্প কেন্দ্রে’ পরিণত করতে চান দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল শনিবার তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান পাল্টা আক্রমণে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন জেলেনস্কি।

কিয়েভ সরকার আয়োজিত একটি ফোরামে বক্তৃতা করার সময় জেলেনস্কি এসব কথা বলেন। এতে অস্ত্র নির্মাতা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো অংশ নেয়। রাশিয়ার অব্যাহত বোমা হামলা সত্ত্বেও কীভাবে ইউক্রেনে যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদন করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

এই ফোরামে ৩০টি দেশের সমরাস্ত্র কোম্পানির নির্বাহীরা অংশ নেন। তাঁদের কয়েকজন বলেন, তাঁরা তাদের কোম্পানিগুলোর মজুত খালি করে দিচ্ছেন। কিন্তু ইউক্রেনের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ফোরামে অংশ নেওয়া আড়াই শতাধিক পশ্চিমা কোম্পানির নির্বাহীদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন প্রতিরক্ষা ম্যারাথনের এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে, যখন পিছিয়ে না গিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদিনই সাফল্য পাওয়া প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন

কিয়েভে আয়োজিত এই ফোরামে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং আমাদের সেনাদের ব্যবহার করা প্রতিটি উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থানীয়ভাবে তৈরিতে আমরা আগ্রহী। এসব অস্ত্র এখন সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সেরা সাফল্য এনে দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি বলেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ও মাইন নিষ্ক্রিয় করার সরঞ্জাম তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবারুদ উৎপাদনও আরও জোরদার করতে চায় ইউক্রেন।

কয়েকটি পশ্চিমা কোম্পানি ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। দেশটির ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। এসব ভূখণ্ড উদ্ধারে গত জুনে কিয়েভ পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কিছু এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনী অগ্রসর হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো শহর পুনরুদ্ধার করতে পারেনি তারা।

ইউক্রেন পশ্চিমা আর্থিক ও সামরিক সহায়তার ওপর খুবই নির্ভরশীল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ ধরনের শত শত কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে দেশটি। কিন্তু অব্যাহতভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

আরও পড়ুন

এই ফোরামে ৩০টি দেশের সমরাস্ত্র কোম্পানির নির্বাহীরা অংশ নেন। তাঁদের কয়েকজন বলেন, তাঁরা তাদের কোম্পানিগুলোর মজুত খালি করে দিচ্ছেন। কিন্তু ইউক্রেনের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

২০ চুক্তি সই

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ফলে দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে। যুদ্ধের কারণে গত বছর দেশটির অর্থনীতি এক-তৃতীয়াংশ সংকুচিত হয়েছে।

কয়েকটি পশ্চিমা কোম্পানি ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর; ড্রোন ও সাঁজোয়া যানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং গোলাবারুদ উৎপাদনে ইতিমধ্যে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ২০টি চুক্তি সই করেছে দেশটির সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কোম্পানিগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করতে একটি তহবিল গঠনসহ দেশীয় প্রতিরক্ষা খাতে পশ্চিমা বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে ইউক্রেনের।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন ও তুরস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, ‘এই খাতে অংশীদারত্ব হবে উভয়ের জন্য লাভজনক। আমি মনে করি, সমরাস্ত্র শিল্পের একটি বৃহৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার এটা ভালো সময় ও স্থান।’

গোলা দেবে সাত দেশ

ইউক্রেনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় গোলা সরবরাহ করতে এবং ফুরিয়ে যাওয়া পশ্চিমা মজুত পূরণ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) সাতটি দেশ গোলাবারুদের ক্রয়াদেশ দিয়েছে। ঐতিহাসিক ইইউ প্রকিউরমেন্ট স্কিমের অধীনে এই ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। ইইউর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে।

অন্তত ২০০ কোটি ইউরোর একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই স্কিম হাতে নেওয়া হয়।