ইউক্রেনকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান দেবে নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক
ইউক্রেনের চেরনিহিভ শহরে গতকাল শনিবারের হামলাটি ছিল বেশ রক্তক্ষয়ী। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিহত হন ৭ জন ও আহত হন ১৪৪ জন। ওই হামলার পর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এদিকে রাশিয়ার ক্রাস্ক শহরে একটি রেলস্টেশনে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন পাঁচজন।
চেরনিহিভ শহরটি ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। শনিবার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পরপরই শহরটির কেন্দ্রস্থলে একটি থিয়েটারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয় বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ শিশু ও ১৫ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
হামলার পর আজ রোববার এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, রাশিয়ার এই সন্ত্রাসী হামলার জবাব দেবেন আমাদের সেনারা। আর সেটি হবে মনে রাখার মতো এক জবাব।’
চেরনিহিভে হামলার দিন অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের একটি উৎসব ছিল। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে চেরনিহিভের আঞ্চলিক গভর্নর ভিয়াচেসলাভ চাউস বলেন, লোকজন গির্জা থেকে ফিরছিলেন। অনেকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। থিয়েটারে হামলার জেরে তাঁরা আহত হন। হামলার সময় ওই থিয়েটারে একটি বৈঠক চলছিল।
এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইউক্রেনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়ক ডেনিস ব্রাউন বলেছেন, শনিবার সকালে অনেকে রাস্তায় হাঁটছিলেন, অনেকে ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য গির্জায় যাচ্ছিলেন। এমন সময় হামলা চালানোটা ‘জঘন্য’।
রুশ রেলস্টেশনে হামলা
এদিকে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ক্রাস্ক শহরে ইউক্রেনের ড্রোন আঘাত হেনেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ ক্রাস্কের আঞ্চলিক গভর্নর বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেন, ড্রোনটি রেলস্টেশনের একটি ভবনের ছাদে আছড়ে পড়ে। এরপর সেখানে আগুন ধরে যায়। এ সময় ছিটকে আসা কাচের টুকরার আঘাতে ওই ব্যক্তিরা আহত হন।
আজ রাজধানী মস্কোতেও ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই হামলা প্রতিহত করার দাবি করেছে তারা। হামলাটি ঠেকানোর জন্য টেলিগ্রামে রুশ সামরিক বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবইয়ানিন। এ ছাড়া রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলেও ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে ক্রেমলিন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষই ড্রোন হামলার শিকার হওয়ার তথ্য সামনে আনছে। এ ছাড়া সোভিয়েত আমলের ‘এসএ–৫ গ্যামন’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা দপ্তর। গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে তারা বলেছে, সাড়ে ৭ হাজার কেজি ওজনের ও ১১ মিটার লম্বা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একসময় আকাশ প্রতিরক্ষার কাজে লাগানো হতো। তবে সেকেলে হওয়ায় সেগুলো আর ব্যবহার করত না ইউক্রেন। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এখন স্থলে থাকা রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউক্রেনকে এফ–১৬ দেবে নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক
এক সফরে আজ ভলোদিমির জেলেনস্কি অবস্থান করেছেন নেদারল্যান্ডসে। এদিন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান দেবে নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক। যুদ্ধবিমান সরবরাহের শর্তগুলো পূরণ হলেই সেগুলো হাতে পাবে কিয়েভ। তবে কতটি এফ–১৬ দেওয়া হবে, তা জানাননি তিনি।
এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে এফ–১৬ সরবরাহের বাস্তব প্রতিশ্রুতি পেলেন জেলেনস্কি। এর কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছিল মার্কিন সরকার।
এফ–১৬ যুক্তবিমানগুলো প্রথম সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হয় ১৯৭৯ সালে। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে এই যুদ্ধবিমান ব্যাপক হারে ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ইউক্রেনের হাতে এই মুহূর্তে সোভিয়েত আমলের কয়েকটি যুদ্ধবিমান আছে। রাশিয়াকে মোকাবিলার জন্য সেগুলো যথেষ্ট নয়। তাই যুদ্ধের শুরু থেকে যুদ্ধবিমান পাওয়ার জন্য তদবির করে আসছিল কিয়েভ।