ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিন যা লুকানোর চেষ্টা করছেন

গত শুক্রবার পুতিন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেনছবি: এএফপি

ইউক্রেনে রুশ হামলার সাত মাস পেরিয়ে গেছে। দিন কয়েক আগে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর এই ঘোষণার পর রাশিয়ার দখলকৃত এলাকায় পাল্টা হামলা জোরদার করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। নিজেদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে তারা কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সিএনএনের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পাদক নিক রবার্টসন এক বিশ্লেষণে বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সময় ফুরিয়ে আসছে। আর তিনি তা জানেন।

নিক রবার্টসন লিখেছেন, সময় ফুরিয়ে আসার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছেন পুতিন। গত শুক্রবার তিনি ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেন।

পুতিন তাঁর ঘোষণায় বলেন, ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া চিরকালের জন্য রাশিয়ার অংশ হয়ে যাবে।

ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন তাঁর বিজয় দাবি করতে মরিয়া। তবে তিনি এখন শান্তির কথা বলছেন। কিন্তু তিনি একটি বিপজ্জনক রাজনৈতিক খেলা খেলছেন।

আরও পড়ুন

ইউক্রেনকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন পুতিন। তিনি কিয়েভকে আলোচনার টেবিলে বসতে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পুতিন এ কথাও বলেছেন, তাঁরা ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোটের ফল নিয়ে কোনো আলোচনা করবেন না। এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। রাশিয়া জনগণের রায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। অর্থাৎ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল নিয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি নন পুতিন।

ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দিলেও পুতিন একটি বিষয় লুকানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। আর তা হলো, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন।

মস্কোভিত্তিক ক্রেমলিন-সমর্থিত রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের প্রধান আন্দ্রে কর্তুনভ সিএনএনকে বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন যত দ্রুত সম্ভব এই পুরো বিষয় (যুদ্ধ) শেষ করতে চান।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি পুতিন আংশিক সেনা নিযুক্তির ঘোষণা দেন। ইউক্রেন যুদ্ধে তিন লাখ সেনা পাঠানোর লক্ষ্যেই তিনি এমন ঘোষণা দেন। কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপ যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া ক্ষতি শিগগির পুষিয়ে দিতে পারবে না। বরং পুতিনের এই ঘোষণা নিজ দেশে তাঁর জন্য ‘বুমেরাং’ হয়ে কাজ করছে।

সেনা নিযুক্তির বিরুদ্ধে রাশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হয়েছে ধরপাকড়। সেনা নিযুক্তির জন্য ‘যোগ্য’ অনেক রুশ নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

ইইউ, জর্জিয়া ও কাজাখস্তানের সরকারি তথ্য অনুসারে, আংশিক সেনা নিযুক্তির ঘোষণার পর থেকে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার রাশিয়ান সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়েছেন।

রাশিয়ার স্বাধীন গণমাধ্যম দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে বলছে, রাশিয়া থেকে পালানো লোকের সংখ্যা আরও বেশি হবে।

আরও পড়ুন

ঠিক কতসংখ্যক রাশিয়ান পালিয়েছ, তার পরিসংখ্যান যাচাই করতে পারেনি সিএনএন। তবে জর্জিয়ার সীমান্তে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাফিক, কাজাখস্তান ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তে মানুষের দীর্ঘ সারি পরিস্থিতির ব্যাপকতা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। এই চিত্র এমন ধারণাকেই জোরালো করে যে পুতিন তাঁর দেশের নাগরিকদের মন পড়তে ব্যর্থ হয়েছেন।

নিক রবার্টসনের ভাষ্য, পুতিনের জন্য ঘড়ির কাঁটা জোরে টিক টিক শব্দ করে ঘুরছে। কারণ, পরিস্থিতি তাঁর প্রতিকূলে।

কর্তুনভ বলেন, বর্তমানে ক্রেমলিনে ঠিক কী চলছে, তা তাঁর জানা নেই। তবে চলমান যুদ্ধে বিপুল ব্যয় ও প্রাণহানির বিষয়ে রুশ জনগণের মেজাজ তিনি বোঝেন।

কর্তুনভ আরও বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করবে, আমরা কেন এই বাজে অবস্থার মধ্যে এসে পড়লাম? আমরা কেন এত লোক হারালাম?’

আরও পড়ুন

কর্তুনভের মতে, এখন পুতিনের সামনে যৌক্তিক বিকল্প হলো, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করা। নিজের শর্তে এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসা। তবে সে জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন দরকার। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে যে অবস্থানে ছিল, সেখানে তারা আর ফিরতে পারবে না। তাই এখন যা আছে, তা নিয়েই তিনি বলতে পারবেন, অভিযান সম্পন্ন।

নিক রবার্টসনের ভাষ্য, এই যুক্তিকেই পুতিন এখন অনুসরণ করছেন বলে মনে হচ্ছে। ইউক্রেনের চার অঞ্চলে ভুয়া গণভোটের ফলকে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। অঞ্চল চারটিকে রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা করেছেন। পুতিন ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে একই কৌশল ব্যবহার করেছিলেন।

আরও পড়ুন