রাশিয়ার বিরুদ্ধে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহারে কতটা ঝামেলায় পড়বে ইউক্রেন

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে দেনদরবার করে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে প্রথম দিকে তাঁর সে আবদার আলোর মুখ দেখেনি।
এখন যুদ্ধের ১৮ মাস গড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির মুখে ইউক্রেনের সেকেলে যুদ্ধবিমানগুলো বদলানো খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে ইউক্রেনের আকাশে দিন দিন নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে রাশিয়ার বিমানবাহিনী।

শেষ পর্যন্ত পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে এফ-১৬ হাতে পাওয়া শুরু করেছে কিয়েভ। যুদ্ধবিমানটি চালানোর জন্য ইউক্রেনের বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চলছে। এখন দেখার অপেক্ষা, যুদ্ধক্ষেত্রে এফ-১৬ ইউক্রেনীয়দের জন্য কতটা আশীর্বাদ হয়ে আসে।

যেখানে বলীয়ান এফ-১৬

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান প্রথম সামনে আসে ১৯৭৮ সালে। যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ পরীক্ষিত এটি। যুদ্ধবিমানটির বেশ কয়েকটি ধরন রয়েছে। অত্যাধুনিক রাডার, সমরাস্ত্র ও অন্যান্য প্রযুক্তি দিয়ে সেগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।

যুদ্ধক্ষেত্রের নানামুখী কাজে এফ-১৬-এর ব্যবহার হয়ে আসছে। আকাশ থেকে ভূমিতে হামলা, কাছাকাছি অবস্থান করা নিজ বাহিনীকে রক্ষায় শত্রুদের ওপর আক্রমণ, আকাশসীমায় আধিপত্য বজায় রাখা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সক্ষমতা রয়েছে এই যুদ্ধবিমানের।

তাত্ত্বিকভাবে বলা চলে, এফ-১৬-যুদ্ধিবমানের বৈমানিক টের পাওয়ার আগেই রুশ যুদ্ধবিমানগুলো সেটিকে শনাক্ত করে ধ্বংস করে দিতে পারবে।

এখানেই শেষ নয়, দিনে কি রাতে—যেকোনো সময়ে, যেকোনো আবহাওয়ায় আকাশে ওড়ানো যায় এফ-১৬। শত্রুদের ধোঁকা দিতে আকাশে তাক লাগাতে সব কসরত করতে পারে এটি। বিভিন্ন ধরনের অভিযানের জন্য পরিচালনা করা যায় যুদ্ধবিমানটি। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এফ-১৬।

আছে একরাশ ঝামেলা

এফ-১৬ ব্যবহারে বড় সুবিধা আছে, তা অস্বীকার করার নয়। তবে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন রাশিয়ার হাতে রয়েছে পঞ্চম প্রজন্মের অত্যাধুনিক সুখোই সু-৫৭ যুদ্ধবিমান। এটির রাডার খুবই উন্নত। সঙ্গে রাখতে পারে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। তাত্ত্বিকভাবে বলা চলে, এফ-১৬-এর বৈমানিক টের পাওয়ার আগেই রুশ যুদ্ধবিমানগুলো সেটিকে শনাক্ত করে ধ্বংস করে দিতে পারবে।

আরেকটি সমস্যা হলো, অন্যান্য সব জটিল কারিগরি প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধবিমানের মতো এফ-১৬-এরও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের দরকার পড়ে। আর যেকোনো রানওয়ে ব্যবহার করে উড়তে পারে না এটি। এদিকে ইউক্রেনের বিমানঘাঁটিগুলোয় নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এতে সেখানকার রানওয়েগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা এফ-১৬ উড়ানোর জন্য একটি সমস্যা।  

আরও পড়ুন

এবার আসা যাক প্রশিক্ষণে। পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে এফ-১৬ চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ইউক্রেনের বৈমানিকেরা। এখানে একটি বাধা হিসেবে কাজ করবে ভাষা। এই বৈমানিকেরা ইংরেজিতে তেমন পটু নন। ফলে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ঠিকঠাকভাবে এফ-১৬ চালানোর কঠিন প্রশিক্ষণ নেওয়া তাঁদের জন্য সহজ হবে না।

রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের বহর বিশাল। ইউক্রেনের প্রতি ১৫টির বিপরীতে রাশিয়ার ১০০টি যুদ্ধবিমান রয়েছে।

যুদ্ধবিমানের অভিযান সফল না ব্যর্থ হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে ভূমিতে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ওপরও। যেমন এই কর্মীরা যদি ভালোভাবে প্রশিক্ষিত হন, তাহলে তাঁরা শত্রুদের তুলনায় যুদ্ধবিমানে দ্রুত জ্বালানি ভরতে এবং অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবেন। ফলে সেগুলো দ্রুত অভিযানে ফিরে যেতে পারবে।

কাজটি কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। ইউক্রেনের এমন প্রশিক্ষিত লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতে দ্রুত সময়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। সমস্যাটা হলো, তাঁরা পশ্চিমা পদ্ধতির সঙ্গে অতটাও পরিচিত নন। তাই ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে তাঁদের কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

বিপদ এড়াতে নয়া কৌশল

রাশিয়ার হাতে বিপুল পরিমাণ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ইউক্রেনে সেগুলো কাজেও লাগাচ্ছে তারা। যুদ্ধে সম্মুখসারির বহু পেছনে ইউক্রেনের বিমানঘাঁটিতে থাকা যুদ্ধবিমানগুলো ধ্বংস করতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রুশ বাহিনী।
এর বিপরীতে একটি কৌশল এঁটেছে ইউক্রেন। যুদ্ধবিমান ধ্বংস এড়াতে ইউক্রেনজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে রানওয়ের এক বিশাল নেটওয়ার্ক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা এই রানওয়েগুলো ব্যবহার করে ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান জ্বালানি ও অস্ত্র নিতে ওঠানামা করতে পারবে।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ভেতরে বসে আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেতে ফ্রেদেরিকসেন। সম্প্রতি ডেনমার্কের স্কাইস্ত্রোপ বিমানঘাঁটিতে
ছবি: রয়টার্স
আরও পড়ুন

কমছে ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান

যুক্তরাজ্যের বিমানবাহিনীর ধারণা অনুযায়ী, গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেন ৬৮টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। সংখ্যাটা দেশটির মোট যুদ্ধবিমানের ২২ শতাংশ। যদিও এই ঘাটতি পূরণে প্রতিবেশী দেশগুলো ইউক্রেনকে সেকেলে কিছু সোভিয়েত যুদ্ধবিমান দিয়েছে। তবে যুদ্ধে পাঠানোর আগে সেগুলোর প্রায়ই বড় আকারের সংস্কারের প্রয়োজন পড়ছে।

যুদ্ধে নিজেদের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সুবিধা নিচ্ছে রাশিয়া। আকাশপথে ইউক্রেনের হামলাগুলো ঠেকিয়ে দিতে তারা দিন দিন সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের বহরও বিশাল। ইউক্রেনের প্রতি ১৫টির বিপরীতে রাশিয়ার ১০০টি যুদ্ধবিমান রয়েছে।

আরও পড়ুন

এদিকে মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনে সব এফ-১৬ পৌঁছাতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। ধাপে ধাপে সেগুলো ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দেওয়া হবে। যুদ্ধবিমানগুলো ওড়াতে শুধু ব্যাপক প্রশিক্ষণের দরকারই নয়, সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অস্ত্র সরবরাহ জারি রাখতে হবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখন পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন। এই হামলায় হয়তো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারত এফ-১৬। তবে যেহেতু শিগগিরই সেগুলো আকাশে উড়ানো যাচ্ছে না, তাই দূরে থাকা শত্রুদের ওপর হামলা চালাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনই আপাতত ভরসা ইউক্রেনের।

আরও পড়ুন