অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে এখন যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন অক্সফোর্ডের গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

অক্সফোর্ডের করোনার টিকা পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ। টিকায় এক স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে চূড়ান্ত ধাপে থাকা পরীক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। এ নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র এবিসি নিউজকে বলেন, যদিও জানা গেছে যে টিকা পরীক্ষায় একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এটি টিকা সম্পর্কিত কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে, আবার তা না–ও হতে পারে।

গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই একজন স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে অক্সফোর্ডে গবেষকদের সম্ভাবনাময় টিকাটি  ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভালোভাবে এগোচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রেও গত সপ্তাহ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা ইনজেকশন নিতে শুরু করেছিলেন। তবে টিকা পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়টিকে অনেক বিশেষজ্ঞ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

জনস হপকিনস বারম্যান ইনস্টিটিউট অব বায়োএথিকসের প্রতিষ্ঠাতা রুথ ফাডেন বলেন, দ্রুতগতিতে টিকা তৈরির ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত আশ্বাসজনক যে এই রাজনৈতিক যুগে, ব্যাপক রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও টিকা পরীক্ষার নিয়মিত পদ্ধতি চালু রয়েছে।

জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক আনা পি ডারবিন বলেন, যেভাবে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালিত হয়, এটা তার উদাহরণ। পরীক্ষা বন্ধ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা পুরোপুরি ঘটনাটি পর্যালোচনা করতে সময় নিচ্ছে। এতে টিকার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সফোর্ডের টিকা পরীক্ষার মতো বড় বড় পরীক্ষায় কিছু অংশগ্রহণকারীর মধ্যে কখনো অসুস্থতা দেখা দেয়। তখন টিকা পরীক্ষা থামিয়ে এ নিয়ে আরও পর্যালোচনা করে টিকা কোনো মারাত্মক প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে কি না, তা দেখা হয়।

ডারবিন বলেন, এই প্রতিকূল ঘটনাকে মূলত যেকোনো অপ্রীতিকর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা টিকা দেওয়ার পর ঘটতে পারে। এটি টিকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতেও পারে আবার তা না–ও পারে।

এতে টিকার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
আনা পি ডারবিন, অধ্যাপক, জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ

প্রতিকূল ঘটনাকে ইনজেকশন দেওয়ার জায়গাটি লাল হয়ে যাওয়া বা ব্যথা হওয়া থেকে শুরু করে মারত্মক জটিলতা পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা যায়। তবে এটি ঠিক টিকার কারণে হচ্ছে কি না, তা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় পর্যালোচনা করে দেখতে হয়।

গতকাল বুধবার চিকিৎসাসংক্রান্ত সাইট স্ট্যাট নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী প্যাসকল সরিওট বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রতিকূল ঘটনা সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের এক নারীকে টিকা পরীক্ষার অংশ হিসেবে ইনজেকশন দেওয়ার পর ট্রান্সভার্স মাইলিটিসি হয়েছে। এটায় স্পাইনাল কর্ডের (স্নায়ু রজ্জু) ব্যথা হয়। ব্যথা সারাতে স্টেরয়েডের দরকার হতে পারে।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অক্সফোর্ডের টিকাটির পরীক্ষা বন্ধ হলো। এর আগে গত জুলাই মাসে নিরাপত্তার কারণে আরেকবার এটি বন্ধ হলেও দ্রুত তা সমাধান করা হয়।
বিশেষজ্ঞ ডারবিন বলেন, ‘তদন্ত বা পর্যালোচনার জন্য পরীক্ষা বন্ধ রাখার কথা আগেও শোনা গেছে। এটা মনে রাখতে হবে, টিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এভাবেই টিকার নিরাপত্তা পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে।

টিকা গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের নিয়ে গঠিন ‘ডেটা অ্যান্ড সেফটি মনিটরিং বোর্ড’ অক্সফোর্ডের টিকাটির প্রতিকূল ঘটনাটি তদন্তে সাহায্য করবেন। তাঁরা টিকা দেওয়ার সময় ও স্নায়ু উপসর্গগুলো বিবেচনা করে দেখবেন। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। এটি পরীক্ষাগারের ফলের ওপর নির্ভর করছে।

গবেষকেরা স্বেচ্ছাসেবীদের আর কারও ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না বা অন্য টিকার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনার বিষয়টি তুলনা করবেন।

নিউইয়র্কের বেলেভু হাসপাতালের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ জোনাথন হাওয়ার্ড বলেন, টিকা প্রয়োগে ট্রান্সভার্স মাইলিটিসির ঘটনা জানা গেলেও আগে কখনো এর প্রমাণ মেলেনি। স্নায়ু রজ্জুর প্রদাহ মূলত শরীরের অটোইমিউন বা স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধী প্রক্রিয়ার কারণে ঘটে থাকে। এতে শরীর নিজের স্নায়ুতন্ত্রের কোষে আক্রমণ করে। এটি যেকোনো সংক্রমণ, অন্তর্নিহিত অটোইমিউন রোগ বা অজানা কারণে ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন