নাভালনির দ্রুত মুক্তি দাবি

মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অ্যালেক্সি নাভালনি
ছবি: এএফপি

রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির দ্রুত মুক্তি দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক দেশ। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

৪৪ বছর বয়সী নাভালনিকে গতকাল রোববার আটক করে রুশ পুলিশ। উড়োজাহাজে করে জার্মানির বার্লিন থেকে রাশিয়ার মস্কোয় পা রাখামাত্র আটক হন নাভালনি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে নাভালনি পরিচিত। রাশিয়ায় তাঁকে আটক করার খবরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ জানাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কি না, সে সম্পর্কে কিছু বলেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ সমালোচকদের স্তব্ধ করতে চাইছে। তিনি নাভালনির তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন মুক্তি দাবি করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন।

নাভালনিকে আটকের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। নাভালনির আটকের ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেন তিনি।নাভালনিকে দ্রুত মুক্তি দিতে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চার্লস মিশেল।

নাভালনিকে আটকের ঘটনায় কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও নিন্দা-উদ্বেগ জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, নাভালনিকে আটকের খবরটি খুবই উদ্বেগের। ভয়াবহ অপরাধের শিকার এক ব্যক্তিকে অত্যাচার না করে রাশিয়ায় কীভাবে তাঁর ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহৃত হলো, কর্তৃপক্ষের উচিত তা তদন্ত করে দেখা।

বার্লিন থেকে নাভালনিকে বহনকারী উড়োজাহাজটির গতকাল মস্কোর আরেকটি বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। নাভালনিকে দেখতে সেখানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে বহনকারী ফ্লাইটটি শেষ পর্যন্ত সেখানে অবতরণ না করে মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে নামার পর নাভালনিকে আটক করে রুশ পুলিশ।

নাভালনি মস্কোয় ফেরামাত্র আটক বা গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল রুশ কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার কারা বিভাগ জানিয়েছিল, জালিয়াতির মামলায় ২০১৪ সালের স্থগিত দণ্ডের শর্ত লঙ্ঘনের জন্য মস্কোতে আসামাত্র নাভালনিকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে। নাভালনি রাশিয়ায় ফৌজদারি অপরাধের মামলারও মুখোমুখি হতে পারেন।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীরা রুশ কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করছেন।

গত বছরের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কোয় যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। প্রথমে তাঁকে সাইবেরিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে যান। নাভালনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে ধীর ধীরে সেরে ওঠেন তিনি। মাস কয়েক বার্লিনে থাকার পর নিজ দেশ রাশিয়ায় ফিরলেন তিনি।

নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নাভালনিকে সোভিয়েত আমলে তৈরি নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।

আরও পড়ুন