ইসলাম ও সন্ত্রাসের পার্থক্য এখন মাদ্রাসায় পাঠ্য
ভারতের দরগা আলা হজরত সম্প্রতি একটি বিষয় পাঠ্য হিসেবে চালু করেছে। বিষয়টির নাম ‘ইসলাম ও সন্ত্রাস’। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনগুলো যে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে বিষয়টি। স্নাতক শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পড়তে পারবেন। এর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারবেন আসলে পবিত্র কোরআনে কী বলা হয়েছে এবং সন্ত্রাসী দলগুলো সেই বিষয়কে কীভাবে উপস্থাপন করছে।
এ বিষয়ের মাধ্যমে আলেমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন, কীভাবে কোরআন-হাদিসের আসল বাণীগুলো বিকৃত করে সন্ত্রাসী দলগুলো নিজেদের মতো করে তৈরি করছে। জামিয়া রাজবিয়া মানজার এ ইসলাম মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিষয়ের ওপর নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করবে। কর্মশালাগুলোতে বোঝানো হবে—কীভাবে ধর্মের অপব্যবহার করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে তরুণদের প্রভাবিত করা হচ্ছে।
১৯০৪ সালে আলা হজরত ইমাম আহমেদ রেজা খান মানজার এ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২০০ জন।
এ বিষয়ের প্রধান ও মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুফতি মোহাম্মদ সালেম নুরি বলেন, ‘অনেক জঙ্গি সংগঠন যেমন—আইএস, আল-কায়েদা ও তালেবানরা হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ভুল কথা প্রচার করছে। এর মাধ্যমে তারা তরুণদের তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য প্রভাবিত করছে। ধর্মীয় বইগুলোর আসল ভাষা হচ্ছে আরবি। এর অনুবাদ করতে গিয়ে তা বিকৃত করে ফেলে তারা। পরে ভুল বাণী শোনায়। এই বিষয়টিতে আমরা প্রকৃত ধর্মীয় বইতে কী বলা আছে এবং সন্ত্রাসী দলগুলো কী অনুবাদ করছে, তা দেখাব। আমরা শিক্ষার্থীদের ইসলামের আসল বাণী শোনাব এবং তাদের দেখাব—কীভাবে আসল বাণীগুলো অন্যভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’
দরগা আলা হজরতের চেয়ারপারসন হজরত সুবহান রাজ খান বলেন, ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইসলামের দুর্নাম হচ্ছে। আমাদের মাদ্রাসার মাধ্যমে আমরা ইসলামে আসল বাণী সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আহসান রাজা কাদরি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তাদের অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা। এই সংগঠনগুলোর ভুল প্রচারণার বিরুদ্ধে যেন তারা কথা বলতে পারে, এ জন্য আমরা আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তৈরি করছি।’
বুধবার থেকে শুরু হওয়া ফাজিল (স্নাতক) পর্যায়ে এই বিষয়ের আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। মাদ্রাসাটি আরও বেশি শিক্ষার্থী আশা করছে। যাঁরা এই বিষয়ে পড়তে আগ্রহী নন বা ভর্তি হননি, তাঁদের জন্যও মাদ্রাসাটি নিয়মিত এই বিষয়ের ওপর কর্মশালা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে এই বিষয়টির গুরুত্ব শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন।