টিকা নিয়েও করোনা, দ্বিতীয় ডোজ ৩ মাস পর
টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও ভারতে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার তিন মাস পর করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বুধবার ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে এত দিন কোনো নির্ধারিত সময়সীমা ছিল না। চিকিৎসকেরা রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সুস্থ হওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহ পর করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিতেন। নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পালের নেতৃত্বে ন্যাশনাল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ভ্যাকসিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর কোভিড-১৯ (এনইজিভিএসি) সুপারিশ করেছে, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়ার তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সুপারিশ গ্রহণ করেছে।
কয়েক দিন আগেই অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এআইআইএমএস) পরিচালক ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সদস্য রনদীপ গুলেরিয়া প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
স্বাভাবিক অবস্থায় করোনার টিকার দুই ডোজের ব্যবধান নিয়েও অবস্থান বদলেছে ভারত সরকার। আগে দেশটিতে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা কোভিশিল্ডের দুই ডোজের ব্যবধান ছিল ছয় থেকে আট সপ্তাহ। কয়েক দিন আগে দেশটি এ ব্যবধান বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ নিলে টিকার সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।
সে সময় কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাস্তবিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে, বিশেষত যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ কোভিশিল্ড টিকার দুই ডোজের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করার সুপারিশ করেছে। তবে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের দুই ডোজের মধ্যকার সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তন আনা হয়নি।
গত তিন মাসে দুই দফায় করোনার টিকার দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়ানোর ঘোষণা দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। রেকর্ড সংক্রমণ ও মৃত্যু এখন ভারতে নিত্যদিনের ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে ভারতজুড়ে করোনার টিকার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও করোনার টিকার অভ্যন্তরীণ সরবরাহ সেভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়নি। কোভিশিল্ডের বাড়তি চাহিদার চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিত খেতে হচ্ছে টিকা উৎপাদনকারী বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান সেরামকে।
সমালোচকেরা বলছেন, টিকা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দুই ডোজের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান দফায় দফায় বাড়াচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তবে আজ বুধবার স্থানীয় সময় রাত আটটা পর্যন্ত ভারতজুড়ে ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৩০২ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।