দিল্লিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের নকল ইনজেকশন বিক্রি, আটক ১০
করোনার পাশাপাশি প্রাণঘাতী মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়ছে ভারত। ইতিমধ্যে দেশটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতজুড়ে ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশনের চাহিদা বেড়েছে। প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের নকল ইনজেকশন বিক্রির অভিযোগে সম্প্রতি দিল্লিতে ২ চিকিৎসকসহ ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক একজন চিকিৎসকের বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ ভায়াল নকল ইনজেকশন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি আজ রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ইনজেকশন নকল করে উৎপাদন, মজুত ও বাজারজাত করছেন অনেকে। এই অভিযোগে ১০ জনকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগ। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন চিকিৎসকও রয়েছেন।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, আটক হওয়া একজন চিকিৎসক আলতামাস হুসেন। নিজামুদ্দিনে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় ৩ হাজার ২৯৩ ভায়াল নকল ইনজেকশন জব্দ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে দিল্লি পুলিশের ডিসিপি মনিকা ভরদ্বাজ বলেন, জব্দ করা নকল ইনজেকশনের বেশির ভাগই প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় ব্যবহার হতো। বেশ কিছু রেমিডিসিভির ইনজেকশনের ভায়াল ছিল। কিছু ভায়ালের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছিল।
৭ জুন দিল্লি সরকারের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে নকল ইনজেকশন বিক্রির অভিযোগ আসে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। এর ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। আটক করা হয় নকল ওষুধ বিক্রি চক্রের ১০ সদস্যকে। ইতিমধ্যে এই চক্র নকল ইনজেকশনের চার শতাধিক ভায়াল বিক্রি করেছে। বাজারে এসব ইনজেকশনের একেকটির দাম ২৫০ রুপি। তবে বাড়তি চাহিদার কারণে কালোবাজারে একেকটি নকল ইনজেকশন বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার রুপির বেশি দামে।
মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পরিবেশে সব সময়ই থাকে। এমনকি মানুষের শরীরেও থাকে। মিউকর নামের এক ধরনের ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। সাধারণত আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় এর বংশবিস্তার বেশি হয়। এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার, পচনশীল ফল ও সবজিতেও। সাধারণত শ্বাসের সময়ে বা শরীরে কাটাছেঁড়া অংশের মাধ্যমে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে। কোভিড–১৯ সংক্রমণসহ বিভিন্ন কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কমে গেলে এটা রোগ হিসেবে দেখা দেয়।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
এআইআইএমএস আরও জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা স্টেরয়েডের অপব্যবহার কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। তবে এর চিকিৎসার ব্যয় তুলনামূলক বেশি। তাই গরিবদের পক্ষে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা করানো বেশ কঠিন হয়ে যায়। সম্প্রতি ঢাকাতেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মিলেছে।