মোদির ভিসা কেন বাতিল হবে না, প্রশ্ন মমতার

নির্বাচনী সভায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিসা কেন বাতিল হবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৭ মার্চ, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে
ছবি: এএনআই।

বাংলাদেশ সফরে এসে আজ শনিবার মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দিতে মন্দির পরিদর্শন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আশীর্বাদ নিয়েছেন মতুয়া গুরুদের কাছ থেকে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ভারতের নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতার এই অভিযোগের কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে আজ। এই নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাংক রয়েছে।
মমতা বলছেন, ভোট গ্রহণ শুরুর দিন বিদেশের মাটিতে মোদির এমন কর্মকাণ্ড বিশেষ এই সম্প্রদায়ের মানুষের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আগের নির্বাচনের একটি ঘটনার সঙ্গে তুলনা টেনে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের দায়ে মোদির ভিসা কেন বাতিল হবে না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচার মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। ওই ঘটনা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন অভিযোগ করে সে সময় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে দেয় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এবার মোদির ওড়াকান্দিতে মতুয়া মন্দির পরিদর্শনের ঘটনায় সেই প্রসঙ্গ সামনে আনলেন মমতা।
আজ পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে এক সভায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্বাচনী বিধি ভেঙে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মন্দিরে গেলেন। সেখানে মতুয়াদের সমর্থন আদায়ের জন্য আশীর্বাদ নিলেন। আমার প্রশ্ন, এবার কেন মোদির ভিসা বাতিল করা হবে না?’

আরও পড়ুন

শুরু হলো ভোট গ্রহণ

পশ্চিমবঙ্গের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আট দফায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফায় পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুরা, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুরের ৩০টি আসনে ভোট হয়েছে আজ। সকাল ৭টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। প্রথম দফার ভোটে ৩০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৯১ প্রার্থী। সর্বশেষ দফায় ২৯ এপ্রিল ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা হবে ২ মে।

প্রথম দফার ভোট গ্রহণ ঘিরে আজ বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকালে সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত ঘোষ শালবনীর ভোটকেন্দ্রে গেলে তৃণমূলের কর্মীরা তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় শনিবার ৩০টি আসনে ভোট হয়েছে। ২৭ মার্চ, পূর্ব মেদিনীপুরের একটি ভোটকেন্দ্রে অপেক্ষমাণ নারী ভোটাররা
ছবি: এএনআই।

পটাশপুরে বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন থানার ওসি এবং দুই পুলিশ কর্মী। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে গণমাধ্যমের একটি গাড়িও। বান্দোয়ানে রাসায়নিক ছড়িয়ে একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাঁথির সাবাজপুরে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন গাড়িচালক। ভগবানপুরে তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন চারজন।
এদিকে বিজেপির দাবি, কোশিয়ারিতে গত রাতে তৃণমূল কর্মীদের হাতে তাঁদের এক কর্মী খুন হয়েছেন। তাঁর নাম মঙ্গল সোরেন। তবে তৃণমূল এই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন

বিজেপি নেতার সাহায্য চাইলেন মমতা, ফোনালাপ ফাঁস

প্রথম দফার ভোট গ্রহণের দিনে অন্যতম আলোচিত ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনালাপ ফাঁস। তমলুক জেলা বিজেপির সহসভাপতি প্রলয় পালকে ফোন করেন মমতা। প্রলয় পাল একসময় তৃণমূলের নেতা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। নন্দীগ্রামে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিলে বিজেপিকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছেন।

প্রলয় পালকে ফোন করে মমতা নির্বাচনে সাহায্য কামনা করেন। তবে প্রলয়ের সাফ জবাব, ‘দলের বিরুদ্ধে গিয়ে তৃণমূলকে সহায়তা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব না।’ মমতাকে প্রলয় আরও বলেন, তিনি শুভেন্দুর পক্ষেই থাকবেন।

মমতা–প্রলয়ের এই ফোনালাপ ফাঁস হলে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘উনি (মমতা) রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন আর ওনার কথায় আবেগ কাজ করে না।’
অন্যদিকে তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘উনি (মমতা) এমন কোনো অন্যায় করেননি। দলের একজন সাবেক নেতাকে তিনি ফোন করতেই পারেন। এটা উদারতার কথা। গর্বের কথা। কিন্তু সেই কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ফাঁস করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা অনুচিত।’

প্রথম দফা ভোটের কেন্দ্রগুলোতে সবচেয়ে প্রার্থী ছিল তৃণমূল ও বিজেপির। তৃণমূল ৩০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পুরুলিয়ার জয়পুর আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। ফলে তৃণমূল লড়ছে ২৯টি আসনে। এই আসনে তৃণমূল সমর্থন দিয়েছে একজন নির্দলীয় প্রার্থীকে। অন্যদিকে বিজেপিও লড়ছে ২৯টি আসনে। বিজেপি একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে তাদের জোট শরিক অল ঝাড়খন্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন প্রার্থী আশুতোষ মাহাতকে।

ভোট দিয়ে ফিরছেন একজন বৃদ্ধা। ২৭ মার্চ, বাঁকুরার একটি ভোটকেন্দ্রে
ছবি: এএনআই।

অন্যদিকে সিপিএম লড়ছে ১৮টিতে। বাম ফ্রন্ট শরিক সিপিআই চারটি, ফরোয়ার্ড ব্লক দুটি, আরএসপি দুটি এবং কংগ্রেস লড়ছে দুটি আসনে।
এবারের ভোটে এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে। একদিকে শাসক দল তৃণমূল অন্যদিকে বিজেপি এবং সেই সঙ্গে বাম দলগুলো। এই জঙ্গলমহল এলাকাটি আদিবাসী, তপসিলি জাতি ও উপজাতি–অধ্যুষিত। দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন বাম দলের নেতারা। তবে ২০১১ সালের পর থেকে এই জঙ্গলমহল তাদের হাতছাড়া হতে থাকে। তারপরও এখানে অনেক বামপন্থী নেতা রয়েছেন, যাঁরা আজও গরিব মানুষের রুটি–রুজির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের ভোটে এই ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৪টিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। তাই এবার এই জঙ্গলমহলের আসনগুলোকে ঘিরে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। থেমে থাকেনি তৃণমূলও। তারা তাদের হারানো মাটি ফিরে পাওয়ার জন্য এবার মাটি কামড়ে ধরে আছে। আর বাম দলগুলোও তাদের হৃত আসন পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই জারি রেখেছে।

আরও পড়ুন