মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি কি জলে গেল

শ্রীনগরে বিক্ষোভকালে ভারতীয় পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন বিক্ষোভকারীরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার দেশটির সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে। এর মধ্য দিয়ে একতরফাভাবে রদ করা হয় জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ও সীমিত স্বায়ত্তশাসন। দুই টুকরা হয় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য। লাদাখকে আলাদা করে বানানো হয় নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু-কাশ্মীরকেও ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে।

ওই সময় মোদি সরকার দাবি করেছিল, এই পদক্ষেপে জম্মু-কাশ্মীরে দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’ সমূল উৎপাটিত হবে। সেই সঙ্গে এ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির দুয়ার খুলবে।

প্রায় তিন বছর পর, বিরোধপূর্ণ এ হিমালয় উপত্যকায় কথিত ওই শান্তির দেখা পাওয়া যায়নি। বন্দুকের লড়াই আর নিশানা করে চালানো হামলায় প্রায় প্রতিদিনই মরছেন কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক লোকজন।

শুধু চলতি বছর এখন পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা ও পুলিশের হামলায় নিহত হয়েছেন শতাধিক সন্দেহভাজন স্বাধীনতাকামী; যাঁদের বেশির ভাগ তরুণ। তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৬ বছর। এ তথ্য এখানকার পুলিশ প্রধান বিজয় কুমারের। বিপরীতে এ বছর অন্তত ১৬ জনকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে। নিহত এই ব্যক্তিদের সাতজন সংখ্যালঘু কাশ্মীরি হিন্দু সম্প্রদায়ের।

আগেই বলা হয়েছে, ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয় ২০১৯ সালের আগস্টে। এরপর উপত্যকাজুড়ে গ্রাস করা সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১৯৭ সদস্য। নিহত হয়েছেন সন্দেহভাজন ৬৭৫ জন স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরি। পাশাপাশি ১৩১ জন সাধারণ মানুষও।

এই ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত এমন ২৩ জন আছেন, যাঁরা সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এমনকি কাশ্মীরের অনাবাসিক মুসলিম অভিবাসী কর্মী, যাঁরা ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে এসেছেন, তাঁরাও ছাড় পাননি।

আরও পড়ুন

সহিংসতার সর্পিল ঢেউ সমালোচকদের মধ্যে এই বিস্ময় ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে মোদি সরকারের ‘পেশিশক্তির নীতি’ কি ব্যর্থ হলো?

স্বজনদের মরদেহের দাবিতেও বিক্ষোভ করতে হয় কাশ্মীরে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিচ্ছিন্নতা-বিভেদ হয়েছে আরও গভীর

২০১৪ সালে ভারতের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। নির্বাচনে জেতার পর দলটি বলেছিল, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা উচিত। এটি এমন একটি বিশেষ নাগরিকত্ব আইন, যেখানে কর্মসংস্থান ও ভূমির ওপর ভারতশাসিত কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তবে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি এ আইনের বিরোধিতা করে আসছিল দশকের পর দশক।

প্রায় তিন বছর পর, বিরোধপূর্ণ এ হিমালয় উপত্যকায় কথিত ওই শান্তির দেখা পাওয়া যায়নি। বন্দুকের লড়াই আর নিশানা করে চালানো হামলায় প্রায় প্রতিদিনই মরছেন কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক লোকজন।

২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আবার ক্ষমতায় এলে ওই আইন বাতিল করার বিষয়টি ছিল বিজেপির অন্যতম প্রতিশ্রুতি। ঠিকই দেখা গেল, এ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পার্লামেন্টে বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হলো বিজেপি।

প্রধানমন্ত্রী পদে মোদি পুনরায় জেতার কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতশাসিত কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়া হয়। কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে ভাগ করে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে আনা হয় নয়াদিল্লির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে।

আরও পড়ুন

‘ঐতিহাসিক’ এ পদক্ষেপে বিজেপির শীর্ষ নেতারা নিজেরা নিজেরাই অভিনন্দনে ভাসছিলেন। মনে করছিলেন, দীর্ঘদিনের কাশ্মীর সংকটের সুরাহা করে ফেলেছেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাঁদের দাবি।

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সীমিত স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সেখানে নজিরবিহীন সেনা সমাবেশ ঘটানো হয়। যদিও (পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধকে ঘিরে) এটি আগে থেকেই ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ সামরিকীকরণকৃত অঞ্চলগুলোর একটি।

জম্মু-কাশ্মীরে মোদি সরকার ‘পেশিশক্তি’ খাটানোর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তারই অংশ হিসেবে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, অধিকারকর্মী, আইনজীবী ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাসের পর মাস চলছে নিরাপত্তার কড়াকড়ি।

৩৭০ ধারা বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীরে নতুন আবাসন আইন সামনে আনে ভারত সরকার। এ আইন অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরে বাইরের লোকজনও স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে পারবেন। আইনটির জেরে এই অঞ্চলে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বসতি গড়ার মধ্য দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে ‘ঔপনিবেশিক প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগও উঠেছে।

শ্রীনগরে টহলরত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এরই মধ্যে গত মাসে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনী এলাকাগুলো নতুনভাবে বিন্যাস করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মোদি সরকার। সেখানে হিন্দু–অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর নিন্দা জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ, এ অঞ্চলে মুসলিমদের ক্ষমতা কমাতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি।

আরও পড়ুন

২০১১ সালে ভারতে চালানো আদমশুমারি অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ। এর মধ্যে মুসলমান ৬৮ দশমিক ৩১ শতাংশ ও হিন্দু ২৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর পুরো কাশ্মীর উপত্যকার ৯৬ শতাংশ মুসলমান।

হিন্দু জাতীয়তাবাদী মোদি সরকারের নানা পদক্ষেপ জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাবের বীজ বুনেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক আইনপ্রণেতা মুহাম্মদ ইউসুফ তারিগামি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে, আশা হারাচ্ছে। এটা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জম্মু-কাশ্মীরে দিন দিন বেড়ে চলা সহিংসতার দিকে ইঙ্গিত করে এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আপনি যখন মানুষকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেবেন, তখন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি দেখা দেবে। দুর্ভাগ্যবশত, কিছুসংখ্যক মানুষ নিজেদের রক্ষায় সহিংসতাকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেবেন। আর এটাই এখন ঘটছে।’

মুহাম্মদ ইউসুফ পিপলস অ্যালায়েন্স অব গুপখার ডিক্লারেশনের (পিএজিডি) একজন সদস্য। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে লড়াই করছে ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর এ জোট। পিএজিডির সদস্য জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও। তিনিও অভিযোগ করেন, মোদি সরকারের নানা পদক্ষেপ তরুণদের সশস্ত্র প্রতিরোধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গত মাসে সাংবাদিকদের মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে, আরও বেশি তরুণ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিচ্ছেন। সংগ্রামে যোগ দেওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে তাঁদের হত্যা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে কখনো হাতে অস্ত্র ধরেননি। সব জায়গায় কাশ্মীরিদের রক্ত ঝরানো হচ্ছে।’

কাশ্মীরে রক্ত ঝরানোর নীতি অবলম্বন করে বিজেপি ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে নিজেদের পক্ষে ভোট কাড়ছে। এ নীতি ফলিয়ে তারা এটাই প্রচার করছে যে কাশ্মীরবাসীকে (স্বাধীনতাকামী) কতটা দমন করে রাখছে তারা—বলছিলেন মেহবুবা মুফতি। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ নীতি কাশ্মীরে কাজ করবে না। শেষ পর্যন্ত এ নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।’

মুসলমানদের প্রতি ‘বিদ্বেষ’ থেকেই কাশ্মীর নীতি

বিজেপি সরকারের কাশ্মীর নীতি নাগরিকত্ব ও সম–অধিকারের ভিত্তিতে নয়; বরং মুসলমানদের প্রতি দলটির বিদ্বেষ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস কলেজ অব লিবারেল আর্টসের শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ জুনাইদ।

মোহাম্মদ জুনাইদ বলেন, ‘এটি এমন একটি নীতি, যার মাধ্যমে কাশ্মীরিদের ও তাঁদের কণ্ঠস্বর জনগণের কাছ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এটাও দেখানো হচ্ছে যে কাশ্মীরে মুসলমানদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত করতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) বাসনা পূরণ করা হচ্ছে।’

এদিকে মোদির কাশ্মীর নীতির পেছনে থাকা মুসলমান বিদ্বেষ শুধু মুসলমানদেরই নয়, এ অঞ্চলে থাকা সংখ্যালঘু হিন্দুদেরও হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সংখ্যালঘু হিন্দুরা পণ্ডিত নামে পরিচিত।

নয়াদিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ও গত শতকের আশির দশকের শেষ ভাগে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিশানা করে শুরু হওয়া হত্যাকাণ্ডের জের ধরে এ উপত্যকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় দুই লাখ পণ্ডিত। খাতা-কলমের হিসাব বলছে, উপত্যকা ছাড়ার সময় ২১৯ পণ্ডিতকে হত্যা করেছেন বিদ্রোহীরা (স্বাধীনতাকামীরা)।

তবে ডানপন্থী হিন্দু দল ও সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বলিউডের একটি সিনেমায় নিহত পণ্ডিতদের সংখ্যা হাজারের ঘরে বলে দাবি করা হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ একে গণহত্যা বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এর পর থেকেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারতশাসিত কাশ্মীরে পণ্ডিতদের পুনর্বাসন করার জোর পদক্ষেপ নিয়েছে দলটি। ২০১০ সালে তাঁদের জন্য একটি পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। প্যাকেজের আওতায় তাঁদের চাকরি ও ঘরবাড়ি দেওয়া হয়। এভাবে যেসব পণ্ডিত কাশ্মীরে ফিরেছেন, গত বছর থেকে তাঁরা সন্দেহভাজন স্বাধীনতাকামীদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন।

পণ্ডিতদের ভাষ্যমতে, চলমান সহিংসতার মধ্যে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এক মাসের বেশি সময় ধরে কাজে যাচ্ছেন না হিন্দু সরকারি কর্মচারীরা। তাঁরা আবার তাঁদের জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছেন।

২০১০ সালে কাশ্মীরে ফিরে আসেন আশ্বিনী কুমার (৪০) নামের এক পণ্ডিত। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আল-জাজিরাকে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘এখন নিজেদের যতটা নিরাপত্তাহীন মনে হয়, আগে কখনো তেমনটা মনে হয়নি। তিন দশক ধরে কিছুই পরিবর্তিত হয়নি।’

জম্মু-কাশ্মীরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ও ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে আসা লোকজনের ওপর হামলার অধিকাংশ ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় স্বল্প পরিচিত সশস্ত্র সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। ২০১৯ সালে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছে। সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে বলেছে, তারা কাশ্মীরে ‘অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের’ এবং ‘বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের’ যাঁরা অংশ, তাঁদের নিশানা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অঞ্চলে ক্রমেই আরও বেশি স্থানীয়ভাবে সশস্ত্র বিদ্রোহের উৎপত্তি হচ্ছে। এটিকে ‘উদ্বেগজনক প্রবণতা’ আখ্যায়িত করে তাঁরা সরকারের প্রতি কাশ্মীরিদের সঙ্গে ‘অধিকতর রাজনৈতিক যোগাযোগ’ স্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছেন।

কাশ্মীরে ১৯৮৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০৬টি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

অজয় শাহনি নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক। কাশ্মীর বিষয়ে মোদি সরকারের নীতির সফলতা-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আল-জাজিরার কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘৩৭০ ধারা প্রত্যাহার হলে কাশ্মীরে সন্ত্রাস নির্মূল হবে, উন্নয়ন ঘটবে ও সেখানে ব্যাপক বিনিয়োগ আসবে—এগুলো যে হয়নি, তারই যৌক্তিকতা তুলে ধরে এসব দাবি। আমি মনে করি না, শুধু নিরাপত্তার মধ্যেই কাশ্মীর সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে।’

এই বিশ্লেষকের কথায়, ‘মোদি সরকার কাশ্মীর উপত্যকায় “বেশি থেকে আরও বেশি মেরুকরণ ও বিচ্ছিন্নকরণের” পথ তৈরি করছে। তাই যত দিন তা চলতে থাকবে, তত দিন আমি সংকট সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখি না।”

সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি দাবি করছে, সরকার কাশ্মীর অঞ্চলে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। দলটির মুখপাত্র অশোক কাউল আল-জাজিরাকে বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী কিছু গোষ্ঠী শান্তি বিঘ্নিত করতে চায় এবং তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দমনাভিযান শুরু করেছে সরকার। এ নিয়ে শুধু বিরোধী পক্ষগুলো হইচই করছে। কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।’

তবে বিজেপি যত অভিযোগই উড়িয়ে দিক, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ জুনাইদ বলছেন, ‘মোদি সরকার চায়, কাশ্মীরে রাজনৈতিক যোগাযোগ বলে কিছু থাকবে না, থাকবে শুধু অব্যাহত দমন–পীড়ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর কাশ্মীরবাসীও নিশ্চিতভাবে এটি মেনে নেবেন না। তাঁদের জন্য এই নীতি ভারতের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দমন–পীড়ন নীতিরই সম্প্রসারণমাত্র।’

ভাষান্তর: মো. আবু হুরাইরাহ্‌ ও শেখ নিয়ামত উল্লাহ