ভারতে সিএএ স্থগিত নয়, সরকারকে জবাবদিহির নির্দেশ আদালতের
ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) রূপায়ণে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেন না। তবে ওই আইন স্থগিত রাখতে চেয়ে যে একগুচ্ছ মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সে জন্য সরকারকে তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৯ এপ্রিল।
চার বছর টালবাহানার পর ১১ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কিত আইনের নিয়মবিধি জারি করে। অর্থাৎ ওই দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে সিএএ চালু হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দুই শতাধিক মামলা জমা পড়ে। সেসব মামলায় এই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের আরজি, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের এজলাস সেই আবেদন খারিজ করলেও কেন্দ্রকে তার বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এজলাসে জবাবদিহির জন্য সময় চান। তিনি বলেন, এই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা বলা হয়নি।
সিএএর বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও আইনের স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ। মোট মামলা হয়েছে ২৩৭টি। তাদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র ও হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁদের অভিযোগ, এই আইন ধর্মীয় আধারে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। তাই সংবিধানের পরিপন্থী।
সিএএ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের পর ও ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের দরুন যেসব হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও পারসি ধর্মাবলম্বীরা ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা আবেদন করলে নাগরিকত্ব পাবেন।
যদিও এই বিধি ঘিরে প্রবল সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, আবেদনের অর্থই হলো নিজেদের নাগরিকত্বহীন বলে ঘোষণা করা। দ্বিতীয়ত, যেসব নথি দাখিল করতে হবে, তা পাওয়া কঠিন। তৃতীয়ত, আবেদন খারিজ হয়ে গেলে আবেদনকারীর হাল কী হবে, তা অজানা। চতুর্থত, নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ হলে এতকাল ধরে পেয়ে আসা নাগরিক পরিষেবাগুলো আর পাওয়া যাবে কি না, সেই প্রশ্নের সদুত্তর না থাকা।
এসব কারণে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন ধরে বলা হচ্ছিল যে সিএএ শর্তহীন নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু তার বদলে বহু শর্ত যোগ করা হয়েছে। তার ওপর উত্তর নেই আবেদন খারিজ হওয়ার অর্থ কী।