আরও ধসের মুখে গৌতম আদানি

গৌতম আদানির অধীন রয়েছে একাধিক বন্দর, মহাকাশ প্রযুক্তি, তাপশক্তি ও কয়লার ব্যবসা
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বে ধনকুবেরদের তালিকায় আরও এক ধাপ নেমে গেলেন ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানি। এই বছরের শুরুতে যিনি ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনবান ব্যক্তি, আজ সোমবার তিনি হয়েছেন ২৫তম। তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের কম। কয়েক বছর ধরে উল্কাসম উত্থানের পর এই প্রথম তিনি এতটা নিচে পড়ে গেলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফোর্বস এবং দেশটির গণমাধ্যম ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের হিসেবে আজ আদানির সম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ৪ হাজার ৮০০ ও ৪ হাজার ৯১০ কোটি ডলার। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, আদানিকে এখন এশিয়ার শীর্ষ ধনীও বলা যাবে না। তাঁর আগে চলে এসেছেন ভারতীয় শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি এবং চীনের দুই শিল্পপতি—ঝং শনশন ও ঝ্যাং ইমিং।

স্পষ্টতই শেয়ারবাজারে কারচুপি ও জালিয়াতি করে আদানির সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে যে প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ পেশ করেছে, তার ধাক্কা আদানি গোষ্ঠী এখনো সামলে উঠতে পারেনি। প্রতিদিনই এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য কমে যাচ্ছে। আজ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘মিন্টে’ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আদানি গোষ্ঠীর মোট সম্পদহানি হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি।

আদানি গোষ্ঠী গত রোববার বড় ধাক্কা খায় নরওয়ের সর্ববৃহৎ পেনশন তহবিল কেএলপির কাছ থেকে। আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডে তাদের যে বিনিয়োগ ছিল, সেটা তারা প্রত্যাহার করেছে। এই বিলগ্নিকরণের কারণ, কেএলপির অজান্তে তাদের শেয়ার জামানত হিসেবে রেখে আদানি গোষ্ঠী অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল কয়লাখনির জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে। আর সেটা তারা করেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মাধ্যমে লুকিয়ে।

আরও পড়ুন

কেএলপির কর্মকর্তা কিরণ আজিজ এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তাঁদের চোখে আদানি বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। কেএলপির কাছে কয়লা বা জীবাশ্ম জ্বালানি কালোতালিকাভুক্ত। তাই কারমাইকেল প্রকল্পের জন্য পরোক্ষে অর্থায়ন বিশ্বাসভঙ্গের শামিল। কেএলপি বুঝেছে, তাদের অর্থ ব্যবহার করে আদানি যা করেছে, তা অন্যায়। তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।

আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর ২০২০ সাল থেকে নজর রাখছে সুইডেনের অ্যানথ্রোপসিন ফিক্সড ইনকাম ইনস্টিটিউট। এই সংস্থার প্রধান উলফ এরল্যান্ডসন বলেছেন, আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা পুঁজি চলে যাচ্ছে কারমাইকেল তহবিলে। তাই কয়লাখনি তহবিলের ওপর বিধিনিষেধ আছে এমন বিনিয়োগকারীদের আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে সতর্ক ও সাবধান হওয়া জরুরি।

ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নে নথিবদ্ধ পরিবেশগত, সামাজিক ও প্রশাসনিক আদেশের ভিত্তিতে চলা ৫০০টির বেশি তহবিল আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। কারমাইকেল কয়লাখনিতে অর্থায়নের জন্য তারা আদানি গোষ্ঠীর ওপর রুষ্ট হতে পারে।

আরও পড়ুন

আজ আদানি গোষ্ঠীর ১০টি নথিবদ্ধ সংস্থার মধ্যে ৮টির শেয়ার মূল্য পড়েছে, বেড়েছে শুধু আদানি পোর্ট ও আদানি পাওয়ারের শেয়ারের দাম। আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার মূল্য কমেছে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি গ্রিন এনার্জির দরপতন হয়েছে পাঁচ শতাংশ করে।

আরও পড়ুন