বুথফেরত জরিপ কেন মোদির বিজেপির রেকর্ড জয়ের আভাস দিচ্ছে

বুথফেরত জরিপের আভাস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসছেফাইল ছবি: রয়টার্স

নরেন্দ্র মোদি (৭৩) টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।

মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার জয় পেতে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন বুথফেরত জরিপ এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে।

বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটির সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন বিরোধী জোটকে আরও ধসিয়ে দিয়েছে বিজেপি।

সাত দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল। শেষ হয় গতকাল শনিবার। ভোট গণনা ৪ জুন। ভোট গণনা শেষেই পাওয়া যাবে আনুষ্ঠানিক ফলাফল। তবে গতকাল ভোট শেষ হওয়ার পরই আসতে শুরু করে বিভিন্ন বুথফেরত জরিপের (এক্সিট পোল) ফলাফল।

আরও পড়ুন

বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনের (২০১৯ সাল) চেয়েও এবার ভালো ফল করতে যাচ্ছে।

বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস সঠিক হলে ব্যাপারটি এমন দাঁড়াবে যে ব্যাপক অসমতা, রেকর্ড বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়গুলো মোদির দল বিজেপির ভোট কমাতে পারেনি; বরং তা বেড়েছে।

স্বাধীন ভারতে এর আগে আর কোনো প্রধানমন্ত্রীই টানা তিনবারের প্রতিবারই আসনসংখ্যা বাড়িয়ে লোকসভা নির্বাচনে জিততে পারেননি। ফলে মোদির জন্য এই জয় এক বিরল ইতিহাসের জন্ম দিতে যাচ্ছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সংস্থাগুলো প্রকাশিত কমপক্ষে সাতটি বুথফেরত জরিপের এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে বিজেপি ও তার মিত্ররা লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩৫০ থেকে ৩৮০টি আসন পেতে পারে। তবে এসব বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস মানতে নারাজ বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট।

আরও পড়ুন

টানা দুই মেয়াদে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার হটানোর আশা নিয়ে দুই ডজনের বেশি রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করা হয়েছিল। বিরোধী জোটটি বলছে, তারা এ ব্যাপারে খুবই আশাবাদী যে ভোট গণনায় তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে।

ভারতে বুথফেরত জরিপগুলোর যথার্থতা নিয়ে সামঞ্জস্যহীনতার রেকর্ড আছে। অতীতে এসব জরিপ কখনো বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য আসন প্রাপ্তির সংখ্যার কমিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। কিংবা অতিরিক্ত আসন প্রাপ্তির আভাস দিয়েছে।

তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গত দুই দশকে এসব জরিপ বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে সাধারণ প্রবণতার পূর্বাভাস দিতে পেরেছে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিআর) জ্যেষ্ঠ ফেলো নীলাঞ্জন সরকার বলেন, মোদি বিপুল জনপ্রিয়। এ কারণেই তাঁর দল বিজেপির সব প্রচারের কেন্দ্রে ছিলেন মোদি।

আরও পড়ুন

নতুন এলাকায় বিজেপির বিস্তার

বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট দেশটির দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় ভালো করবে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ বুথফেরত জরিপের ইঙ্গিত হলো, দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় অত্যাশ্চর্য সাফল্য অর্জন করতে যাচ্ছে বিজেপি।

বেশ কয়েকটি বুথফেরত জরিপ পূর্বাভাস দিয়েছে, বিজেপি কেরালায় দু–তিনটি আসন পেতে পারে। ভারতীয় বামদের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এই রাজ্যে মোদির দল কখনো জয়ী হয়নি।

জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি এবার তামিলনাড়ুতে এক থেকে তিনটি আসন পেতে পারে। গত নির্বাচনে এখানে এখানে কোনো আসনই পায়নি বিজেপি।

কর্ণাটক ছাড়া দাক্ষিণাত্যে হিন্দি-বলয়ের দল হিসেবে পরিচিত বিজেপি। গত নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্যের ২৮ আসনের মধ্যে ২৫টিতে জিতেছিল। এবারের নির্বাচনে বিজেপি ও তার মিত্ররা কর্ণাটকে আগের আসন ধরে রাখার আশা করছে।

অন্যদিকে, তেলেঙ্গানার বিজেপি একক বৃহত্তম বিজয়ী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

আরও পড়ুন

অর্থাৎ বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি দক্ষিণে তার অবস্থানের বিস্তার ঘটাতে চলছে।

পূর্বাভাসের আলোকে রাজনৈতিক ভাষ্যকার অসীম আলী বলেন, দক্ষিণে বিজেপির সাফল্যলাভ আশ্চর্যজনক বিষয়। ভবিষ্যদ্বাণীগুলো দক্ষিণে বিজেপির বিশাল সাফল্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জরিপে যতগুলো আসন বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে, ফলাফলে তারা ততগুলো না পেলেও দক্ষিণে তাদের ভোট বাড়ার বিষয়টি একটি বড় পরিবর্তন।

রাজস্থানের ৭৬ বছর বয়সী ভোটার সুধা যোশি। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি তাঁর স্মার্টফোন থেকে চোখই সরাচ্ছিলেন না। কারণ, তখন বুথফেরত জরিপে মোদির বিপুল জয়ের খবর একের পর এক আসছিল। আর তিনি তা বুঁদ হয়ে দেখছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে মোদি যখন প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন, তখনই তিনি তাঁর মধ্যে এমন একজন নেতাকে দেখতে পেয়েছিলেন, যিনি ভারতকে একটি আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন

বুথফেরত জরিপগুলো দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে সুধা যোশি বলেছিলেন, ‘আমরা তাঁর (মোদি) সরকারের শাসনব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। কারণ, তিনি আমাদের মতো একজন ধার্মিক ব্যক্তি, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুধা যোশির এই মতামতে একটি বড় পরিসরের ভারতীয় ভোটারদের অনুভূতির প্রতিফলন রয়েছে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিআর) জ্যেষ্ঠ ফেলো নীলাঞ্জন সরকার বলেন, ভারতীয় সমাজের একটি বড় অংশের ভাবনা হলো, মোদি সেই ব্যক্তি, যাঁকে বিশ্বাস করা যায়। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে নেতা হিসেবে ভাবা যায়। বিজেপি তার নির্বাচনী সাফল্যের জন্য মোদির জনপ্রিয়তার কাছে ঋণী।