‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় যোগ দিচ্ছেন সোনিয়া গান্ধীও

ছেলে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে পদযাত্রায় সঙ্গী হবেন বলে ঠিক করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী
ফাইল ছবি: এএফপি

আলোচিত ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় যোগ দেবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আজ সোমবারই তিনি কর্ণাটক যাচ্ছেন। আগামী বৃহস্পতিবার ছেলে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভারত জোড়ো যাত্রায় হাঁটবেন তিনি। এতে অংশ নেবেন মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। কংগ্রেসের বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সোনিয়া গান্ধী ছিলেন বিদেশে। এ ছাড়া ক্যানসারে আক্রান্ত কংগ্রেস নেত্রীর ধুলাবালু ও ভিড় এড়িয়ে চলতে চিকিৎসকের পরামর্শও রয়েছে। এ জন্য দীর্ঘদিন থেকে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা এড়িয়ে যান। তবে এবার ছেলের সঙ্গে পদযাত্রায় সঙ্গী হবেন বলে ঠিক করেছেন।

আরও পড়ুন

অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) এক নেতা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা কংগ্রেসের কাছে ধর্মযুদ্ধের মতো। বিজেপি-আরএসএসের বিভেদকামী নীতির বিরুদ্ধে এ যাত্রা কংগ্রেসের জবাব। সীমিতভাবে হলেও সোনিয়া গান্ধী তাঁর মতো করে সেই যুদ্ধে শামিল হতে চান।’

ওই নেতা আরও বলেন, দক্ষিণ কর্ণাটকের কাবেরি নদী–সংলগ্ন মান্ডিয়া জেলায় সোনিয়া গান্ধী পদযাত্রায় অংশ নেবেন। তবে কতক্ষণ হাঁটবেন, তা নির্ভর করবে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর।

কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার মাইশুরু (সাবেক মহীশূর) পৌঁছে সন্ধ্যায় সোনিয়া গান্ধী যাবেন চামুন্ডেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে। প্রার্থনার পর তিনি বিশ্রাম নেবেন কোডাগু জেলার মাডিকেরি রিসোর্টে। মঙ্গল ও বুধবার কর্মসূচির বিরতি। রাহুল ওই দুই দিন মা ও বোনের সঙ্গে থাকবেন। বৃহস্পতিবার সবাই মিলে যাত্রা শুরুর কথা। তবে তার আগে সোনিয়া গান্ধীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন

আগামী বছর কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। দক্ষিণের এই রাজ্যের শাসক বিজেপি নানা সমস্যায় পর্যুদস্ত। গত লোকসভা ভোটে এই রাজ্যের ২৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ২৫টি। কংগ্রেস মনে করছে, বিধানসভা ও লোকসভা—দুই ভোটেই এই রাজ্যে দলগত অবস্থার ব্যাপক উন্নতির সুযোগ আছে। এ কারণে সাড়ে পাঁচ মাসব্যাপী এ যাত্রার ২১ দিন কাটানো হবে কর্ণাটকে।

এ রাজ্যের মতো ২১ দিন ধরে পদযাত্রা চলবে আর মাত্র একটি রাজ্যে। সেটি হলো কংগ্রেসশাসিত রাজস্থানে। তামিলনাড়ুতে কর্মসূচি চলেছে পাঁচ দিন। কেরালায় ১৮ দিন। কর্ণাটকে ২১ দিনে আট জেলায় রাহুল হাঁটবেন মোট ৫১১ কিলোমিটার। সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা অন্য কোনো রাজ্যে রাহুলের যাত্রায় সঙ্গী হবেন কি না, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে।

কর্ণাটকে সোনিয়ার যাওয়ার অন্য একটি কারণও রয়েছে। কংগ্রেসের সভাপতি প্রার্থী মল্লিকার্জুন খাড়গে এ রাজ্যের মানুষ। খাড়গেও পদযাত্রায় রাহুল-সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গী হতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সে বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না।

দলের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, এ নির্বাচনে গান্ধী পরিবার ‘নিরপেক্ষ’। কংগ্রেসও প্রকাশ্যে বলেছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউ ‘আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থী’ নন। কিন্তু মুখে না বললেও কংগ্রেস মহলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, গান্ধী পরিবারের পছন্দের ব্যক্তি খাড়গেই।

ভারত জোড়ো যাত্রায় কর্ণাটকে রাহুলের সঙ্গে সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সঙ্গী হলে এবং খাড়গেও সেখানে উপস্থিত থাকলে সভাপতি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক বার্তাটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি এটাও বোঝানো যাবে, আগামী ভোটের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস এ রাজ্যে ভালো ফলের জন্য কতটা সচেষ্ট।

কর্ণাটক ছেড়ে যাওয়ার আগে ১৯ অক্টোবর বেলারিতে বিশাল এক জনসভার আয়োজন করবে কংগ্রেস। আমেথির পাশাপাশি এই বেলারি থেকেও ১৯৯৯ সালে সোনিয়া দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর প্রথম লোকসভা নির্বাচনে। বেলারিতে হারিয়েছিলেন বিজেপির সুষমা স্বরাজকে। পরের বছর তিনি বেলারি আসন ছেড়ে দিয়ে আমেথি রাখেন।

বেলারি বিখ্যাত খনিজ সম্পদের জন্য। কংগ্রেসের আন্দোলনের কারণে বেলারির বেআইনি খনি-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। তার সুফল কংগ্রেস পেয়েছিল ২০১৩ সালের বিধানসভা ভোটে। কংগ্রেস মনে করছে, কর্ণাটকে ২১ দিনের যাত্রা দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।