কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন শুরু, ভোট দিলেন সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কা

দিল্লির ২৪ আকবর রোডে দলের সদর দপ্তরে ভোট দেন সোনিয়া গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
ছবি: কংগ্রেসের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন শুরু হলো। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের সর্বত্র কংগ্রেস দপ্তরে আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী আজ বেলা ১১টায় দিল্লির ২৪ আকবর রোডে দলের সদর দপ্তরে এসে ভোট দেন। একই সঙ্গে ভোট দেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এখানে ভোট দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মোট ৭৫ জন প্রতিনিধি এখানে ভোট দেবেন।

৯ হাজারের কিছু বেশি প্রতিনিধি গোপন ব্যালটে ঠিক করবেন, দলের সভাপতি হিসেবে তাঁরা কাকে বেছে নেবেন। লড়াই ৮০ বছর বয়সী মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে ৬৬ বছরের শশী থারুরের। যিনিই জিতুন, দীর্ঘ ২৪ বছর পর তিনিই হবেন নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ।

আরও পড়ুন

রাহুল গান্ধীসহ যেসব কংগ্রেস প্রতিনিধি এখন ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়ে কর্ণাটকে রয়েছেন, তাঁরা আজই ভোট দেবেন। রাহুলসহ অন্তত ৪০ জন পদযাত্রীর ভোটদানের জন্য কর্ণাটকের বেলারি জেলায় বিশেষ ভোটকেন্দ্র খুলেছে কংগ্রেস। নির্বাচন উপলক্ষে আজ ভারত জোড়ো যাত্রা স্থগিত রাখা হয়েছে।

আজ ভোট শেষ হওয়ার পর সব ভোট বাক্স ‘সিল’ করে দেওয়া হবে। কাল মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ভোট বাক্সগুলো দিল্লিতে আনা হবে।

২৪ আকবর রোডে কংগ্রেস সদর দপ্তরে ভোট গণনা শুরু হবে আগামী বুধবার। তার আগে সব ভোট বাক্স থেকে ব্যালট বের করে মিশিয়ে দেওয়া হবে, যাতে কে কাকে ভোট দিয়েছেন, তা গোপন থাকে।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি জানিয়েছে, দেশজুড়ে মোট ৩৬টি ভোটকেন্দ্রে ৬৭টি বুথ খোলা হয়েছে। প্রতিটি বুথে ২০০ জন ভোট দিতে পারবেন।

এই প্রথম প্রত্যেক ভোটদাতাকে কিউআর কোডসহ পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচন কমিটির দাবি, এতে ভোটদানে স্বচ্ছতা থাকবে।

আরও পড়ুন

এবারের প্রাক্‌ ভোটপর্ব ছিল নাটকীয়তায় ভরা। রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রশ্নে অনড় থাকায় লড়াই অনিবার্য হয়ে ওঠে। রাহুল জানিয়ে দেন, শুধু নিজেই নন, গান্ধী পরিবারের কেউ সভাপতি পদে দাঁড়াবেন না।

কেরালার থারুর শুরু থেকেই উৎসাহী ছিলেন। সোনিয়া ও রাহুল চেয়েছিলেন, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট দায়িত্ব নিন। এতে দুটি বিষয়ের সমাধান হতে পারত। গেহলটকে দলের কান্ডারি করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্ব তুলে দেওয়া যেত নবীন নেতা শচীন পাইলটের হাতে। শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন গেহলট।

তখন ভাবা হয়, মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহের নাম। তিনি মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পছন্দের প্রার্থী হয়ে ওঠেন কর্ণাটকের দলিত নেতা খাড়গে।

খাড়গেই ‘গান্ধী পরিবারের’ অঘোষিত প্রার্থী। খাড়গে জিতলে দীর্ঘ ৫২ বছর পর তিনি হবেন কংগ্রেসের আরেক দলিত সভাপতি। ১৯৭০-৭১ সালে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন বিহারের দলিত নেতা জগজীবন রাম।

গান্ধী পরিবারের সমর্থন যে খাড়গের প্রতি, তাতে সন্দেহ নেই। বেশির ভাগ প্রতিনিধির সমর্থনও যে তিনিই পেতে চলেছেন, স্বয়ং থারুর সে বিষয়ে নিশ্চিত। তিনি বারবার সে কথা জানিয়েছেন।

সে কথা জানিয়ে গতকাল রোববার লক্ষ্ণৌতে প্রচারের সময় থারুর ক্রিকেটের পরিভাষায় বলেন, ‘এমন একটা পিচে আমি ব্যাট হাতে নেমেছি, যা অসমান। বল পড়ে একই উচ্চতায় আসছে না। কিন্তু এই পিচেই আমাকে ব্যাট করতে হবে।’

আরও পড়ুন

দুই প্রার্থীর জন্য একই রকমের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা হয়নি। অর্থাৎ দুজনে একই ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন না—এই অভিযোগ থারুর প্রচারপর্ব শুরুর পর থেকেই বলে আসছেন।

মধ্যপ্রদেশের ভোপালে গিয়ে থারুর বলেছিলেন, ‘একমাত্র এখানেই দেখলাম, প্রদেশ সভাপতি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। অন্যত্র দেখছি, প্রদেশ নেতৃত্ব আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।’

কংগ্রেসে সভাপতি পদে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০০০ সালে। ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে উত্তর প্রদেশের রাজীব-ঘনিষ্ঠ নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদকে হারিয়েছিলেন সোনিয়া। জিতেন্দ্র পেয়েছিলেন মাত্র ৬৭টি ভোট। এর আগে ভোট হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। জিতেছিলেন কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ সীতারাম কেশরী। হারিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ার ও রাজস্থানের রাজেশ পাইলটকে।

আরও পড়ুন