বিজেপি
ফাইল ছবি

ভারতের ছয় রাজ্যের সাত বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফলে বিজেপির ঔজ্জ্বল্য এখনো ফিকে হয়নি। এই সাত আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে তিনটি। মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) একটি করে আসন জিতেছে। জোর লড়াই হচ্ছে ওডিশার ধামনগর কেন্দ্রে বিজেপি ও বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং তেলেঙ্গানার মনুগোডে কেন্দ্রে বিজেপি ও তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) মধ্যে। সাত আসনের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে ছিল দুটি। এই উপনির্বাচন তাদের খালি হাতে ফেরাল।

কংগ্রেসের আসন দুটির একটি ছিল হরিয়ানার আদমপুর, অন্যটি তেলেঙ্গানার মনুগোডে। আদমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক কুলদীপ বিষ্ণোই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় বিধানসভা আসনও ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর পুত্র ভব্য বিষ্ণোইকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি। ভব্য জিতেছেন। তেলেঙ্গানার মনুগোডে আসনের কংগ্রেস বিধায়ক কে রাজগোপাল রেড্ডি দলত্যাগ করে বিজেপি প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন। নবম রাউন্ড শেষে তিনি টিআরএস প্রার্থীর চেয়ে চার হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। ওডিশার ধামনগর কেন্দ্রেও লড়াই হচ্ছে সমানে সমানে। বিজেপি সেখানে বিজেডি প্রার্থীর চেয়ে পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে। এই আসন বিজেপিরই ছিল। মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা প্রার্থী ঋতুজা লাটকে আন্ধেরি পূর্ব কেন্দ্র থেকে জিতেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর শিবসেনা তাঁকে প্রার্থী করে। এই কেন্দ্রে বিজেপি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থী তুলে নেয়।

উত্তর প্রদেশের গোলা গোরক্ষনাথ কেন্দ্রটি বিজেপিরই ছিল। সমাজবাদী পার্টিকে হারিয়ে আসনটি তারা দখলে রাখল। বিহারের গোপালগঞ্জ কেন্দ্রটিও বিজেপির ছিল। কঠিন লড়াই শেষে কেন্দ্রটি তারা ধরে রাখল। বিহারের আরেকটি কেন্দ্র মোকামা আসন জিতেছে আরজেডি। এই কেন্দ্রও তাদেরই দখলে ছিল। বিহারের ফল দেখাল, নীতীশ কুমার সরে যাওয়ার পর বিজেপি কিছুটা কমজোরি হলেও একেবারে দুর্বল হয়নি। তেমনই জোট শক্তি এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি যে বিজেপিকে তারা হেলায় ধূলিসাৎ করবে।

সাত কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অভিমুখ যা ছিল, হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাট বিধানসভার ভোটেও সেই হিন্দুত্ববাদ বিজেপির প্রধান উপজীব্য। গতকাল রোববার হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে বিজেপি। তার প্রথম প্রতিশ্রুতিতে তারা জানিয়েছে, আবার ক্ষমতায় এলে তারা রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করবে।

এই একই প্রতিশ্রুতির কথা বিজেপির শীর্ষ নেতারা শুনিয়েছেন গুজরাটেও। সেখানে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে, যারা খতিয়ে দেখবে রাজ্যে কীভাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা যায়।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি–সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি ছাড়াও বিজেপি জানিয়েছে, হিমাচল প্রদেশে ক্ষমতায় এলে এবার তারা রাজ্যের সব ওয়াকফ সম্পত্তির সমীক্ষা শুরু করবে। দেখবে, ওয়াকফ সম্পত্তির আয়-ব্যয় ও পরিচালন আইনমাফিক হচ্ছে কি না। গত সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর প্রদেশ সরকার রাজ্যে ওয়াকফ সম্পত্তির সমীক্ষা চালু করেছে। হিমাচল প্রদেশেও তা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো।

হিমাচল প্রদেশের লড়াই এবারেও দ্বিমুখী। বিজেপির চ্যালেঞ্জার কংগ্রেস গত শনিবার তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। তাতে এক লাখ লোকের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বিজেপি তাদের ইশতেহারে আট লাখ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অর্থনীতির স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যতই ‘খয়রাতি’ রাজনীতির সমালোচনা করুন, নির্বাচন কমিশন যতই ‘ডোল-খয়রাতি’ নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাব দিক, বিজেপি ও কংগ্রেস দুই দলই খয়রাতির প্রতিশ্রুতিকে বড়ভাবে তুলে ধরেছে। কংগ্রেস বলেছে, জিতলে সবার জন্য ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা মূল্যে দেওয়া হবে, ১৮-৬০ বছর বয়সী নারীদের মাসে দেড় হাজার রুপি সাহায্য দেবে। এর পাল্টা বিজেপির প্রতিশ্রুতি, ছোট কৃষকদের বছরে তিন হাজার রুপি আর্থিক সহায়তা, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্রীদের সাইকেল ও কলেজছাত্রীদের স্কুটি। দেবস্থানগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রতিটি জায়গায় যান চলাচলযোগ্য সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও তারা দিয়েছে। তাতে খরচ করবে ১০ বছরে ১২ হাজার কোটি রুপি।

দান-খয়রাতিতে বিজেপি ও কংগ্রেসকে অবশ্য পেছনে ফেলে রেখেছে আম আদমি পার্টি। তাদের নজরে এবার শুধুই গুজরাট। তারা আগেই জানিয়েছে, গুজরাটে চালু করবে দিল্লি মডেল। দিল্লি মডেলে রয়েছে বিনা মূল্যে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি। প্রতিটি ব্লক স্তরে সরকারি খরচে চিকিৎসার জন্য মহল্লা ক্লিনিক স্থাপন। সরকারি স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালের মান উন্নয়ন ও সরকারি পরিষেবা দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া। গুজরাটে আম আদমি পার্টির মোকাবিলায় বিজেপি এখনো তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেনি।

আরও পড়ুন

গুজরাটে সরে দাঁড়াতে আম আদমিকে বিজেপির টোপ

আরও পড়ুন

ভোটে জিতলে আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং