স্বাধীনতার অমৃতকালে পাঞ্জাবে অমৃতপাল–রহস্য

পৃথক শিখ রাষ্ট্রের ধারণা বহু পুরোনো হলেও ১৯৮০–এর দশকের গোড়া থেকে আন্দোলনে গতি সঞ্চার হতে থাকে। দ্বিতীয় পর্বের খালিস্তানি আন্দোলনের রেশ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা অজানা।

অমৃতপাল সিং

সাড়ে তিন দশক পর ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে নতুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তান আন্দোলনের মেঘ জমতে শুরু করেছে। এর পরিণতি কী, এখনই সেটা নিয়ে কিছু বলা সমীচীন নয়, কারণ যাঁকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন হঠাৎ নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে, সেই অমৃতপাল সিংকে পাঞ্জাব পুলিশ এখনো ধরতে পারেনি। পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে থাকুন অথবা দেশেই কোথাও আত্মগোপন করুন, ভবিষ্যতে অশান্তির আশঙ্কা জিইয়ে থাকছে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো রাতারাতি খালিস্তানের সমর্থনে শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মন কী করে ও কেন এভাবে উদ্বেলিত হলো, চলছে সেই গবেষণা।

খালিস্তানি বীজ বপন ও সর্বাত্মক মদদ

শিখধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠন ছিল খালিস্তান আন্দোলনের লক্ষ্য। ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব নিয়ে প্রস্তাবিত সেই পৃথক শিখ রাষ্ট্রের মধ্যে পরবর্তীকালে ভারতের হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশের অংশবিশেষকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পৃথক শিখ রাষ্ট্রের ধারণা বহু পুরোনো হলেও ১৯৮০–এর দশকের গোড়া থেকে আন্দোলনে গতি সঞ্চার হতে থাকে। আর্থসামাজিক কারণ ছাড়াও ওই আন্দোলনের পেছনে ছিল পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হকের প্রবল মদদ।

আরও পড়ুন
পৃথক শিখ রাষ্ট্রের ধারণা বহু পুরোনো হলেও ১৯৮০–এর দশকের গোড়া থেকে আন্দোলনে গতি সঞ্চার হতে থাকে। এই আন্দোলনের মেঘ আবার জমতে শুরু করেছে
ফাইল ছবি: এএনআই

১৯৬০–এর দশকের মাঝামাঝি ভারতের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে আধুনিকতার জোয়ার আসে প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর উদ্যোগ ও কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের প্রচেষ্টায়। শুরু হয় ‘সবুজ বিপ্লব’। শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর সেই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যান ইন্দিরা গান্ধী। সবুজ বিপ্লবের সুফল সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তর প্রদেশে।

সত্তর দশকের শেষাশেষি সবুজ বিপ্লবের সুফল ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় দেশের নীতিনির্ধারকেরা পাঞ্জাবে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠায় অনাগ্রহী ছিলেন। সোনা ফলানো কৃষিজমিতে শিল্প প্রসারে কৃষকদের অনাগ্রহও ছিল সমান। কারণ, আজও ভারতে কৃষি আয় আয়করমুক্ত। ফলে কালের স্বাভাবিক নিয়মে জন্ম নেয় ছদ্ম বেকারত্ব। ক্রমেই দেখা দিতে থাকে আর্থসামাজিক অসন্তোষ। সেই অসন্তোষের পালে বাতাস জোগাতে উৎসাহিত হন পাকিস্তানের সেনাশাসক জেনারেল জিয়া উল হক।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে ইসলামপন্থী করে তোলার পাশাপাশি ভারতকে দুর্বল করার নতুন ছকও তিনি কষে ফেলেন। শুরু হয় তাঁর ‘থাউজ্যান্ড কাটস’ তত্ত্বের প্রয়োগ। তাঁর উপলব্ধি, ভারতকে সরাসরি যুদ্ধে হারানো পাকিস্তানের পক্ষে অসম্ভব। ভারতকে দুর্বল করতে হবে। জায়গায় জায়গায় সৃষ্টি করতে হবে অসন্তোষের আগুন, যাতে ভেতর থেকে দেশটা দুর্বল হয়ে পড়ে। পাকিস্তান তার সুযোগ নেবে। জিয়া উল হকের বিশেষ নজর ছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পাঞ্জাব।

আরও পড়ুন

১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে পাঞ্জাবের আনন্দপুর সাহিবে স্বাধীন খালিস্তানের ঘোষণা হয়। প্রথম সভাপতি হন জগজিৎ সিং চৌহান। ধীরে ধীরে আন্দোলন গতিপ্রাপ্ত হয়। রাজ্যজুড়ে তো বটেই, পাঞ্জাবের বাইরেও শুরু হয় প্রবল অরাজকতা। দেদার লুট, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ ও রাজনৈতিক হত্যায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি গুরুদ্বার হয়ে ওঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ যুব সম্প্রদায়ের ডেরা।

আন্দোলনের রাশ ক্রমেই চলে যায় জার্নাল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের হাতে। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরকেই তিনি করে তোলেন ডেরা। অবশেষে ১৯৮৪ সালের জুন মাসে শুরু হয় ‘অপারেশন ব্লু স্টার’। স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানে নিহত হন ভিন্দ্রানওয়ালে। ক্রমেই স্তিমিত হয়ে পড়ে আন্দোলন। যদিও তার মাশুল দিতে হয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। নিজ গৃহে শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীর, ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবরে।

সরকারি হিসেবে খালিস্তানি আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ৭১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী, ৭ হাজার ৯৪৬ জন জঙ্গি এবং ১১ হাজার ৬৯০ জন সাধারণ নাগরিক। বেসরকারি হিসাব অনেক বেশি।

আজকের পাঞ্জাব, দীপ সিধু ও অমৃতপাল

আজকের পাঞ্জাবে সমৃদ্ধির চেয়ে হতাশা বেশি। এত হতাশা, এত হাহাকার ও এত পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণও অনেক। প্রধান কারণ যদিও অর্থনৈতিক। বেকারত্ব ও কৃষিনির্ভরতাজনিত সর্বাত্মক হতাশায় হামাগুড়ি দিয়ে গোটা রাজ্যে শুরু হয়েছে মাদকের দাপাদাপি। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে পাঞ্জাবের প্রধান সমস্যা। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকায় কোনোভাবেই কারও পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না মাদকের মোকাবিলার। পাকিস্তান এ সুযোগ গ্রহণে গড়িমসি করেনি। সরকারি গোয়েন্দাদের মতে, রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও মাদক কারবারিদের যোগসাজশের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে পাকিস্তান। ষোলো আনা মাদকই পাঞ্জাবে আসছে সীমান্তের ওপার থেকে।

এ পরিস্থিতিতে পাঞ্জাবি সিনেমার জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা সন্দীপ সিং সিধু যুব সম্প্রদায়কে জোটবদ্ধ করে আর্থসামাজিক পরিবর্তন আনতে এগিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে আচমকাই তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। সেই বছর এই রাজ্য থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর পুত্র সানি দেওল। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে সিধু নেমে পড়েন। পরের বছর ঝাঁপিয়ে পড়েন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা কৃষক আন্দোলনে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি গড়ে তোলেন এক আধা রাজনৈতিক সংগঠন। নাম দেন ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’, অর্থাৎ পাঞ্জাবের উত্তরাধিকারী। কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়ে দিল্লি অভিযানের সময় এই সন্দীপ সিং সিধুই লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা নামিয়ে তুলে দিয়েছিলেন শিখ খালসার ধর্ম পতাকা ‘নিশান সাহিব’। সন্দীপ থেকে তত দিনে তিনি সবার কাছে পরিচিত হয়ে গেছেন ‘দীপ সিধু’ নামে।

মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাবে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দীপ সিধুর মৃত্যু হয়। যে সংগঠন তিনি গড়ে তুলেছিলেন, একলহমায় তা অনাথ হয়ে পড়ে। সেই শূন্যতা ঝড়ের বেড়ে পূরণ করেন অজ্ঞাতকুলশীল অমৃতপাল সিং, পাঞ্জাবি সমাজ ও রাজনীতিতে যে নাম গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগে কেউ কোনো দিন শোনেনি।

সেই অর্থে পাঞ্জাবের সমাজ ও রাজনীতিতে অমৃতপালের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। দীপ সিধুর ছেড়ে যাওয়া সংগঠনের দায়িত্ব নিজের হাতে নিজের মতো করে তুলে নেওয়ার সময় তিনি দাবি করেছিলেন, প্রয়াত অভিনেতার সঙ্গে তিনি নাকি শুরু থেকে ছিলেন। কিন্তু কেউ কোনো দিন তাঁকে দেখেনি। দীপের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও নন। তিনি এতটাই অপরিচিত ছিলেন যে গোয়েন্দারাও তাঁকে যাচাই করার কোনো সুযোগ পাননি। অবশেষে এটুকু জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে অমৃতপাল দুবাইয়ের বাসিন্দা। সেখানে গাড়ি চালাতেন।

২০২২ সালের শেষার্ধে পাঞ্জাবে ফিরে শিখ সম্প্রদায়ের ‘হৃতগৌরব’ ফিরিয়ে পৃথক শিখ রাষ্ট্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা শুনিয়ে আসর জমিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, ভিন্দ্রানওয়ালের অসমাপ্ত সংগ্রাম নতুনভাবে শুরু করাই তাঁর ধর্ম। ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গে চেহারায় মিল থাকার দৌলতে হতাশাগ্রস্ত যুবাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি চলে যান মোগা জেলার রোড গ্রামে, যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন ভিন্দ্রানওয়ালে। সেখানেই ‘দস্তর বন্দি’ অনুষ্ঠানে ভিন্দ্রানওয়ালের ঢঙে পাগড়ি বেঁধে তাঁর মতো পোশাক পরে নিজেকে তিনি জাহির করেন দ্বিতীয় ভিন্দ্রানওয়ালে হিসেবে। একই সঙ্গে তুলে নেন ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’র দায়িত্বও।

ভিন্দ্রানওয়ালে ও অমৃতপাল

জগজিৎ সিং চৌহান খালিস্তানের স্বপ্ন প্রথম দেখালেও শিখমনে সেভাবে তুফান তুলতে পারেননি। পাকিস্তান গিয়ে জগজিৎ সিং খালিস্তানের স্বপ্ন সার্থক করতে সরাসরি তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বিধ্বস্ত ভুট্টোর কাছে সেটা ছিল হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো।

চৌহানকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রস্তাব করেন, স্বতন্ত্র শিখ রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়া উচিত শিখদের প্রথম গুরু নানক দেবের জন্মস্থান পাঞ্জাবের নানকানা সাহিব। বিদেশে থাকা জগজিৎ সিং চৌহান ভারতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বেছে নিয়েছিলেন জার্নাল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেকে। পাঞ্জাবের রাজনীতিতে সেই সময় শিরোমণি অকালি দল ক্রমশ পায়ের তলার জমি শক্তি করছিল। ভিন্দ্রানওয়ালেকে তারাও মদদ দিতে শুরু করে। ভিন্দ্রানওয়ালে হয়ে ওঠেন খালিস্তানি আন্দোলনের মুখ্য চরিত্র। পূর্ব ভারতে নকশালপন্থী আন্দোলনের পর প্রকৃত অর্থে বন্দুকের শাসন শুরু হয় পাঞ্জাবেই। অস্ত্রের জোগানেও স্পষ্ট মদদ ছিল পাকিস্তানের। পরিহাসের বিষয় এটাই, রাজ্য রাজনীতির স্বার্থে এই ভিন্দ্রানওয়ালেকেই একটা সময় রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব ব্যবহার করেছিলেন দাবার বোড়ে হিসেবে।

প্রধানত ভিন্দ্রানওয়ালের উদ্যোগ ও পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হকের বদান্যতায় দেদার অস্ত্রে ছেয়ে যায় পাঞ্জাব। ১৯৮১-৮২ সাল নাগাদ রাজ্যে শুরু হয় যথেচ্ছাচার। ইন্দিরা গান্ধীর ধৈর্যের বাঁধ ক্রমশ ভাঙছিল। অবশেষে মরিয়া হয়ে তিনি সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। সেই অভিযানে শেষ হন ভিন্দ্রানওয়ালে। যদিও মৃত্যু তাঁকে অমর করে দেয়।

হতাশাদীর্ণ পাঞ্জাবে সাড়ে তিন দশক পর সেই ভিন্দ্রানওয়ালের পুনর্জন্ম ঘটালেন অমৃতপাল সিং।

তাঁর মুখ থেকে সেই ধরনের কথা শোনা গেল ভিন্দ্রানওয়ালে যা বলে বিখ্যাত হয়েছিলেন। যেমন ‘আশির দশকে শিখ গণহত্যা ঘটেছিল। এখন চলছে নিঃশব্দ গণহত্যা…কৃষির সর্বনাশ করে, কৃষকদের আত্মহননের পথে এগিয়ে দিয়ে, মাদক ছড়িয়ে, দেশের সেরা সম্পদ মানবশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে।’ এ অবস্থার পরিবর্তনে শিখ কৌমকে (জাতি) কী করতে হবে সেই নিদানও অমৃতপাল সময় সময় বাতলেছেন। বলেছেন, ‘আমাদের স্বাধীন হতে হবে।

ভারতীয় ঔপনিবেশিকতার গোলামি বন্ধ করতে হবে।’ ভিন্দ্রানওয়ালের জয়গান গেয়ে অমৃতপাল বলেছেন, ‘১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা পেয়ে গেলে আজকের এই হাল হতো না। ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশদের কাছে আমরা শিখ সাম্রাজ্য হারিয়েছি। সেই সাম্রাজ্য আমাদের ফিরে পেতে হবে।’

কীভাবে? ‘দস্তর বন্দী’ অনুষ্ঠানে অমৃতপাল প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন, ‘ভিন্দ্রানওয়ালেই আমার প্রেরণা। তাঁর দেখানো পথেই আমি হাঁটব। আমি ভিন্দ্রানওয়ালের মতো হতে চাই, কারণ শিখ কৌম আমাকে সেভাবেই দেখতে চায়।’

প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই

অমৃতপাল সিংকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টনক কেন এত দিন পরে নড়ল, তার কোনো ব্যাখ্যা কোনো মহলে নেই। কী করে এত অনুগামী এতখানি সশস্ত্র হয়ে উঠতে পারল, তা–ও বিস্ময়! এটা কি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা? উত্তর নেই সেই প্রশ্নের। রাজ্যে আম আদমি পার্টির সরকারকে হেনস্তা ও বিব্রত করার জন্য অমৃতপালকে এত দিন কি ছেড়ে রাখা হয়েছিল?

কিংবা তাঁর মারফত যুবা মনের ক্ষোভ ও ক্রোধের বাষ্প বেরোনোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল? প্রশ্নগুলো উঠেছে। রাজ্য সরকারের অনভিজ্ঞতা সার্বিক এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হয়ে থাকলেও অভিজ্ঞ কেন্দ্রীয় সরকার আগে কেন আরও কড়া পদক্ষেপ নেয়নি বা রাজ্য সরকারকে সক্রিয় হতে বাধ্য করেনি, সেই প্রশ্ন জ্বলজ্বল করছে।

এ সুযোগে রাজ্য ও রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে চাইছে শিরোমণি অকালি দল। খালিস্তান আন্দোলনের প্রারম্ভে যে দলের যোগসাজশ ছিল বহু আলোচিত, অমৃতপাল ও নব্য খালিস্তানিদের ওপর রাষ্ট্রীয় অভিযানের কড়া সমালোচনায় তারা আজ মাঠে নেমেছে।

হতোদ্যম কংগ্রেস, শক্তিহীন বিজেপি ও আম আদমি পার্টির অগোছালো কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার সুযোগ নিয়ে পাঞ্জাবি যুবাদের ওপর পুলিশি আক্রমণ, যথেচ্ছ ধরপাকড় ও দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে স্বর উঁচিয়ে শিরোমণি অকালি দল চাইছে হৃতশক্তি পুনরুদ্ধার করতে। রাজ্যের প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠতে।

ক্ষণস্থায়ী এই দ্বিতীয় পর্বের খালিস্তানি আন্দোলনের রেশ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা অজানা। স্বাধীনতার অমৃতকালে পাঞ্জাবে খালিস্তানি অমৃতপালের উত্থান ও অন্তর্ধান–রহস্যের জট কীভাবে খুলবে, পঞ্চনদের তীরে তো বটেই, দেশের নজরও সেই দিকে।