ভারতের কুস্তি ফাউন্ডেশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ও বিজেপির লোকসভা সদস্য ব্রিজভূষণ শরণ সিং
ফাইল ছবি: এএনআই

কুস্তিগিরদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ও বিজেপির লোকসভা সদস্য ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দিল্লি পুলিশ। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগিরকে শ্লীলতাহানির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

ব্রিজভূষণ উত্তর প্রদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। দেশের শীর্ষস্থানীয় কুস্তিগিরেরা গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার একাধিক অভিযোগ এনেছিলেন। বিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক, বজরঙ্গ পুনিয়াদের মতো অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী সাত কুস্তিগির এসব অভিযোগ এনে দিল্লিতে ধরনা শুরু করেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগিরও ছিল। সে সময় কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত করেন কুস্তিগিরেরা। সরকারও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল।

কিন্তু চার মাস পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার না করায় গত ২৩ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অবস্থান আন্দোলন শুরু করেন কুস্তিগিরেরা। তবে আন্দোলনের এক মাস কেটে গেলেও সরকার নীরব থাকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত দিল্লি পুলিশ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দাখিল করে। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় না। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৮ মে পার্লামেন্টের নতুন ভবন উদ্বোধনের দিন কুস্তিগিরেরা ভবনটির দিকে যাত্রা শুরু করেন। তাঁদের বাধা দিয়ে বলপ্রয়োগ করে গ্রেপ্তার করা হয়। কুস্তিগিরেরা ‘সরকারি ঔদাসীন্যের’ প্রতিবাদে গঙ্গায় পদক ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন দেশের কৃষক আন্দোলনের নেতারাও। শেষ পর্যন্ত কুস্তিগিরেরা সরকারকে ৫ জুন পর্যন্ত সময় দেন।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কুস্তিগিরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। তিনি আশ্বাস দেন, ১৫ জুনের মধ্যে পুলিশ তদন্ত শেষ করবে। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি পুলিশ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযোগপত্র দাখিল করল। তবে দিল্লি পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ‘পকসো’ ধারায় মামলা খারিজ করার আবেদন জানিয়েছে।

দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্দোলন করে আসছিলেন ভারতের কুস্তিগিরেরা
ফাইল ছবি: এএনআই

ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআরের একটি ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্তার। সেই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ আনা হয়েছিল। অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন হেনস্তা থেকে সুরক্ষা দিতে ‘দ্য প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস-পকসো’ আইনটি করা হয় ১০ বছর আগে। এই আইনে অভিযুক্তকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করা বাধ্যতামূলক। শাস্তিও কঠোর।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ওই কুস্তিগিরের বাবা গত মঙ্গলবার পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে প্রতিযোগিতায় অকৃতকার্য হওয়ায় রাগের বশে তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। আন্দোলনরত কুস্তিগিরেরা যদিও এর পেছনে রাজনীতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন। দিল্লি পুলিশ ৫০০ পৃষ্ঠার আলাদা প্রতিবেদন পেশ করে জানিয়েছে, পকসো আইনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ওই মামলা খারিজ করা হোক।

অভিযোগপত্র দাখিলের পর সরব কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রিনাতে আজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, দিল্লি পুলিশের মূল লক্ষ্য বিজেপি সাংসদকে বাঁচানো। হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রের অর্ধেক তারা খরচ করেছে ব্রিজভূষণকে পকসো আইন থেকে বাঁচাতে। সেই জন্য এত দিন ধরে তারা ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার করেনি। অথচ পকসো আইনে বলাই আছে, অভিযোগ পাওয়ামাত্র গ্রেপ্তার বাধ্যতামূলক, যেন অভিযুক্ত তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে না পারেন।

সুপ্রিয়া এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে বলেছেন, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট বিনেশ ফোগত প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। সুপ্রিয়া বলেন, তাঁরা মনে করেন, শাসক দল অভিযোগ ধামাচাপা দিতে চাইলেও বিচারব্যবস্থার কারণে ন্যায়বিচার পাবেন কুস্তিগিরেরা।

আরও পড়ুন

ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ও জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ১৮০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সে জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দিল্লি পুলিশ তদন্ত করেছে। অভিযোগের প্রমাণে ভিডিওসহ বহু তথ্য পেশ করা হয়েছে। কথা বলেছে ব্রিজভূষণের পরিবারের সদস্য ও সংস্থার কর্মীদের সঙ্গেও।

আরও পড়ুন