চীনের ‘আগ্রাসী’ ভূমিকা নিয়ে সংসদে আলোচনায় রাজি নয় ভারত সরকার

ভারতের পার্লামেন্ট ভবন
ছবি: এএনআই

গলওয়ান–কাণ্ডের পর যা হয়েছিল, তাওয়াং সংঘর্ষের পরও তারই পুনরাবৃত্তি। চীন ও তার ‘আগ্রাসী’ ভূমিকা নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আগ্রহী নয়। বিরোধীদের প্রবল দাবি সত্ত্বেও সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল। এ কারণে আজ সোমবার আরও একবার বিরোধীরা সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করলেন। লোকসভাতেও অগ্রাহ্য হলো বিরোধীদের দাবি।

তাওয়াংয়ে চীনা আগ্রাসন নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষেই আলোচনার দাবি জানায় কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল। আজ সে জন্য দুই কক্ষেই বিরোধীরা নোটিশ দেয়। রাজ্যসভায় জমা পড়ে মোট নয়টি নোটিশ। কিন্তু চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় ‘নিয়মমাফিক’ নয় বলে সব নোটিশ অগ্রাহ্য করেন। বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘চীন আমাদের ভূখণ্ডে জাঁকিয়ে বসছে। এ নিয়ে আলোচনা না করলে কী নিয়ে কথা বলব আমরা?’ চেয়ারম্যান মুলতুবি প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে বিরোধীরা সভাকক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। লোকসভাতেও অগ্রাহ্য হয় বিরোধী দাবি। ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে ভারত ও চীনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরও বিরোধীদের দাবি মেনে সংসদে আলোচনা হয়নি। এমনকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও অকুস্থলে যাওয়ার দাবি সরকার মেনে নেয়নি।

সংসদে আলোচনার দাবি মানতে সরকার রাজি হবে না জেনে কংগ্রেস তার প্রচার জোরালো করে তুলেছে। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, সরকার সবকিছু লুকিয়ে রাখতে চায়। অথচ অতীতে সব সময় সরকার অকুস্থলে সাংবাদিক ও সংসদ সদস্যদের যেতে দিয়েছে। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ তো অবশ্যই, ১৯৯৯ সালেও কার্গিল যুদ্ধের পর সরকার সংসদ সদস্যদের অকুস্থলে নিয়ে গেছে। দোকলাম–কাণ্ড নিয়েও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছিল। এখন সরকার আলোচনা এড়ানোর মধ্য দিয়ে নিশ্চিতভাবেই কোনো তথ্য ও সত্য আড়াল করতে চাইছে।

কংগ্রেসের অভিযোগ, দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ১৬ রাউন্ড আলোচনার পরও ডেপসাং উপত্যকায় চীন ১৮ কিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ড অধিকার করে রেখেছে (লাদাখের বিজেপি সংসদ সদস্যদের অভিযোগও তা–ই)। এতকাল যেসব এলাকায় ভারতীয় বাহিনী টহল দিয়ে এসেছে, এখন সেখানে যেতে পারে না। জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন বিমান বাহিনীর ১২ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান কম থাকা নিয়ে। ইউপিএ সরকার ছয়টি স্করপিয়ন সাবমেরিনের বরাত দিয়েছিল। অথচ তা এখনো আসেনি। ‘অগ্নিপথ’–এর জন্য সেনা নিয়োগও কমে গেছে। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আপনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন। সে জন্যই কি চীন আগ্রাসী? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, ২০১৩ সালে আপনার বলা কথা “সমস্যা সীমান্তে নয়, সমস্যা দিল্লিতে” সত্যি?’

বিজেপি বিরোধিতার ক্ষেত্রে আম আদমি পার্টি কখনো কংগ্রেসের সঙ্গ দেয়নি। কোনো বিষয়ে প্রকাশ্যে সহমতও প্রকাশ করেনি। অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সংঘর্ষের পর আম আদমি পার্টিও সরকারের সমালোচনায় মুখর। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, একের পর এক চীনা আগ্রাসন ঘটছে অথচ সরকার তাদের পুরস্কৃত করছে। গত রোববার এক বৈঠকে সেই পুরস্কারের ব্যাখ্যায় দলনেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, চীন যত আগ্রাসী হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি তত ঘটছে। ২০২০-২১ সালে চীন থেকে ভারত সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, এক বছর পর তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলার।

আরও পড়ুন

চীনে ফেরার প্রশ্নই ওঠে না: দালাই লামা

তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা সোমবার বলেন, চীনে ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। হিমাচল প্রদেশের কাংড়াই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে ভারত ও চীনা ফৌজের মধ্যে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে চীনকে কোনো বার্তা দেওয়ার আছে কি না, প্রশ্ন করা হলে চতুর্দশ দালাই লামা বলেন, ‘সাধারণভাবে সর্বত্র পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়ায়। এমনকি চীনও নমনীয় হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে চীনে ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ প্রবীণ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী দালাই লামা এই সঙ্গে বলেন, ‘ভারত আমার পছন্দের। ভারত সেরা স্থান।’ এএনআইয়ের সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘কাংড়া, পণ্ডিত নেহরুর পছন্দ করে দেওয়া জায়গা, এটাই আমার স্থায়ী ঠিকানা।’ তিব্বতের এই ধর্মগুরু ১৯৫৯ সাল থেকে ভারতে রয়েছেন।

আরও পড়ুন