পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ ফিরলেন কলকাতায়

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।

গ্রেপ্তার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অবশেষে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারল আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আজ মঙ্গলবার তাঁকে ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরপর হেফাজতে রেখে চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করবে ইডি।

গতকাল সোমবার রাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন খারিজ করে এ নির্দেশ দিয়েছেন ইডির বিশেষ আদালত।

বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে। তাঁকেও ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তাঁকে আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছেন বিশেষ আদালত। তবে অর্পিতার আইনজীবীরা গতকাল কোনো জামিনের আবেদন জানাননি।

ঠিক যেমনটা বাংলাদেশে অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত পি কে হালদারের মামলায় করা হয়েছিল। যেহেতু অনেক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে অভিযোগ, সেহেতু জামিন চাইলেও পাওয়া যাবে না। এটা বুঝেই পি কে হালদার ও অর্পিতা কারও ক্ষেত্রেই ইডির বিশেষ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়নি।

স্কুল শিক্ষাবিষয়ক কমিশনের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্তারা এখন সরাসরি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম টেলিভিশনের পর্দায় বলতে শুরু করেছেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের সাবেক এক চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন, বেআইনিভাবে নিয়োগের জন্য তাঁর ওপর চাপ আসছিল এবং একটা পর্যায়ে চট্টোপাধ্যায় তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন। চিত্তরঞ্জন মণ্ডল একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কয়েক বছর আগে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দেন তিনি।

এই ধরনের অভিযোগ সম্পর্কে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নির্দিষ্টভাবে জানতে চাইবে ইডি। কাগজপত্র দেখিয়ে এবং আরও যাঁরা এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে পৃথকভাবে ও মুখোমুখি বসে চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করা হবে।

যেহেতু তাঁকে দেড় সপ্তাহ ইডির হেফাজতে থাকতে হবে, তাই তিনি কীভাবে এই চাপ সামাল দেন সেটার ওপর প্রচারমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের নজর থাকবে। ইডির হেফাজতে যাতে না থাকতে হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলে কলকাতা হাইকোর্টে গত রোববার জানিয়েছিল ইডি।

হাইকোর্ট ইডিকে অনুমতি দেয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে ভুবনেশ্বরে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার। গতকাল তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতাল থেকে ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের অল ইন্ডিয়া মেডিকেল সায়েন্সে (এইমস) নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছে ইডি। কিছু ছোটখাটো পুরোনো সমস্যা বাদ দিলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় মোটামুটি সুস্থ বলে ভুবনেশ্বরের হাসপাতাল জানিয়েছে। পার্থকে আজ কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইডি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে হেফাজতে নেবে বলে জানা যায়।

শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে টানা ২৭ ঘণ্টা জেরা করার পর শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করে ইডি। তাঁকে আদালতে তোলা হলে দুই দিন ইডির হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর একাধিক শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে।

আরও পড়ুন

গ্রেপ্তারের পর পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থতা বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে শাসক দলের আবেদনে ভর্তি করা হয় কলকাতার পিজি হাসপাতালে। আদালতের সেই নির্দেশে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইডি। এরপরই ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শনিবার রাতেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রী বাস্তবের বেঞ্চে আবেদন করা হয় ইডির পক্ষ থেকে। পার্থকে নামী কোনো এইমস থেকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করে ইডি। এরপর হাইকোর্ট তাঁর দ্রুত পরীক্ষার জন্য ভুবনেশ্বরের এইমসে নেওয়ার আদেশ দেন।

গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইডি জানায়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পরিষদ ও পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির তদন্তের সূত্রে বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রচুর টাকার ছবিও দেওয়া হয়। ছবিগুলো ইতিমধ্যেই অন্তর্জালে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব। তাঁকে গ্রেপ্তার করার আগে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে ইডি। অর্পিতা পার্থর সহকারী বলে জানিয়েছে ইডি। অর্পিতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ কোটি রুপি জব্দ করেন ইডি কর্মকর্তারা।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আগে বেসরকারি একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।