ভারতে সুড়ঙ্গের উদ্ধারপর্ব নিয়ে চাঞ্চল্য না ছড়াতে সরকারি নির্দেশনা
ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশী জেলায় নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারপর্ব ঘিরে চাঞ্চল্য না ছড়ানোর নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার দুপুরে প্রচারিত এক নির্দেশিকায় এই বিষয়ে প্রচারমাধ্যমকে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছে।
সরকারি এই নির্দেশিকার মূল লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন সংবাদভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, উদ্ধারকাজ চলছে পুরোদমে। দিবারাত্র। এই সময়ে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে উদ্ধারকাজে বাধা আসে। সুড়ঙ্গের কাছাকাছি ক্যামেরা, সাংবাদিক ও সরাসরি সম্প্রচারের জন্য অন্যান্য যন্ত্রাদি রাখা যাবে না। সরকার চায় না কোনোভাবে কাজে বাধা সৃষ্টি হোক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বহু মানুষ ও সংস্থা এই কাজে যুক্ত। একটাই লক্ষ্য, সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা। সুড়ঙ্গ ঘিরে যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তা অত্যন্ত সংবেদনশীল। ঘটনাস্থল থেকে কর্মযজ্ঞ সরাসরি সম্প্রচার, ভিডিও ও ছবি দেখানো উদ্ধারকাজের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ।
সংবাদভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়, উদ্ধারপর্বের ছবি বা ভিডিও দেখানোর সময় তারা যেন বিশেষভাবে সতর্ক থাকে। খবরের শিরোনাম বাছাইয়ের সময়ও যেন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কারণ, বিষয়টি সংবেদনশীল। সংবাদ প্রচারের সময় আটকে পড়া শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারসহ অন্যদের মানসিক অবস্থাও বিবেচনায় রাখতে হবে।
এ ধরনের উদ্ধারকাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সব সময় বিপুল আগ্রহ থাকে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল সেই আগ্রহেরই নিরসন ঘটায়। এমন মনে করা হচ্ছে, উদ্ধারপর্বকে কেন্দ্র করে সরকার কোনো রকম সমালোচনায় পড়ুক, তা কেন্দ্র ও উত্তরাখন্ডের বিজেপি সরকার চায় না। প্রধানত সে জন্যই এই নির্দেশিকা জারি বলে কোনো কোনো গণমাধ্যমের ধারণা।
উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে ধ্বংস করার বিরুদ্ধে উত্তরাখন্ডের পরিবেশবিদদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অনেক দিন ধরেই ক্ষুব্ধ। সম্ভবত সরকার চায় না, সুড়ঙ্গে আটকে থাকা কর্মীদের উদ্ধারপর্বকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো বিতর্ক গড়ে উঠুক।
তবে সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের বের করে আনার আশা মঙ্গলবার অনেকটাই উজ্জ্বল হয়েছে। ১০ দিনের মাথায় ৪১ জন শ্রমিক কেমন আছেন, তা এদিন প্রথমবার দেখা গেছে। ৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটা পাইপ সুড়ঙ্গমুখ থেকে ৬০ মিটার দূরত্বে আটক শ্রমিকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই পাইপ দিয়ে কাচের বোতল ভর্তি করে পাঠানো হয়েছে রান্না করা খিচুড়ি, নানা রকমের ফল, পানি ও জরুরি ওষুধপত্র। আটক শ্রমিকেরা যাতে বাড়ির মানুষজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, সে জন্য একটি মোবাইল ফোন ও চার্জারও পাঠানো হয়েছে। আটকে থাকা শ্রমিকদের অক্সিজেন ও বৈদ্যুতিক আলো পেতে অসুবিধা হচ্ছে না।
এদিন পাইপ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এন্ডোস্কোপিক ফ্লেক্সি ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা শ্রমিকদের ভিডিও তুলেছে। ক্যামেরা দেখিয়েছে প্রত্যেকেই জীবিত ও আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ আছেন। উদ্ধারকারীরা তাঁদেরকে মনোবল অটুট রাখতে বলে জানিয়েছেন, শিগগিরই তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য থাইল্যান্ড ও নরওয়ের দুটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে ডেকে পাঠিয়েছে উত্তরাখন্ড সরকার। থাইল্যান্ডের সংস্থাটি ২০১৮ সালে ১২ জন খুদে ফুটবলারকে একটি গুহা থেকে উদ্ধার করেছিল।
উদ্ধার অভিযানে গতি আনতে ভারতের ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা ডিআরডিও থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রিমোট নিয়ন্ত্রিত ‘দক্ষ’কে। ডিআরডিও এই বহুমুখী যন্ত্র ‘দক্ষ’ তৈরি করেছে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য। ডিআরডিও ইতিমধ্যেই ২০ ও ৫০ কেজি ওজনের দুটি রোবট সুড়ঙ্গের মধ্যে পাঠিয়েছে। পাহাড়ের ওপর থেকে ড্রিল করে সুড়ঙ্গ কেটে আটক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টাও সমান্তরালভাবে চালানো হচ্ছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুড়ঙ্গমুখ থেকে ৬০ মিটার দূরে শ্রমিকেরা আটকে রয়েছেন। ধসের মধ্য দিয়ে ২৪ মিটার পর্যন্ত তিন ফুট ব্যাসার্ধের একটা পাইপ নিয়ে যাওয়া গেছে। মাটি ও পাথর কেটে ৬০ মিটার পর্যন্ত তা নিয়ে যেতে আরও তিন–চার দিন সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে শ্রমিকেরা একে একে বের হতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।