সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা নিয়ে বিশ্বব্যাংকে কিছুই জানায়নি ভারত

চেনাব নদীর ওপর ভারতের নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ‘বাগলিহার হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট’–এর একটি দৃশ্য। কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি একতরফা স্থগিত করেছে ভারতছবি: এএনআই

পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) একতরফা স্থগিত করার ভারতের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংককে (ডব্লিউবি) কিছু জানানো হয়নি। বিশ্বব্যাংক এ কথা জানিয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে নিশ্চিত করেছে।

আন্তর্জাতিক এ চুক্তির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানিবণ্টন–সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিশ্বব্যাংক।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে ভারত।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজাকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ভারত ওই চুক্তি স্থগিত করছে এবং ‘অবিলম্বে তা কার্যকর’ হবে।

পেহেলগামে হামলার পর ভারত ঘোষণা দেয়, ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর থাকা ওই চুক্তি ‘স্থগিত’ করা হবে। দৃশ্যত, এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীগুলোর (চেনাব, ঝিলম ও মূল সিন্ধু—যা ‘পশ্চিমা নদী’ নামে পরিচিত) পানিসংক্রান্ত তথ্য–ভাগাভাগি বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ সম্পর্কে তাকে অবগত করা ভারত বন্ধ রাখবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের যে পানি পাওয়ার কথা, তা তাদের দেবে না দেশটি।

চিঠিতে লেখা হয়, ‘একটি চুক্তিকে ঐকান্তিক আস্থার সঙ্গে মেনে চলা একটি মৌলিক বাধ্যবাধকতার বিষয়। কিন্তু এর বদলে আমরা দেখছি, পাকিস্তান থেকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে ধারাবাহিকভাবে সীমান্ত–সন্ত্রাস পরিচালনা করা হচ্ছে।’

ভারতের এক সরকারি সূত্র দ্য হিন্দুকে বলেছে, ‘চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংককে জানানোর “কোনো প্রয়োজন” নেই।’

বিশ্বব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চুক্তি নিয়ে সদস্যদেশগুলোর সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে তাঁরা কোনো মতামত দেননি।

আরও পড়ুন

পেহেলগামে হামলার পর গত বুধবার ভারত ঘোষণা দেয়, ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর থাকা ওই চুক্তি ‘স্থগিত’ করা হবে। দৃশ্যত, এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীগুলোর (চেনাব, ঝিলম ও মূল সিন্ধু—যা ‘পশ্চিমা নদী’ নামে পরিচিত) পানিসংক্রান্ত তথ্য–ভাগাভাগি বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ সম্পর্কে তাকে অবগত করা বন্ধ রাখবে ভারত।

‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, যদি ভারত সিন্ধু নদীর পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তবে তাকে পুরোপুরি আইডব্লিউটি চুক্তি উপেক্ষা করতে হবে। চুক্তির বর্তমান শর্তে তা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া চুক্তি স্থগিত করার অর্থ, চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের যে পানি পাওয়ার কথা, ভারত তা তাদের দেবে না।

পেহেলগামের ঘটনার আগে ২০২২ সাল থেকে ‘পার্মানেন্ট সিন্ধু কমিশন’–এর বৈঠক ডাকা হয়নি। কমিশনের অধীন ভারত ও পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞ দল সিন্ধু অববাহিকার পানি–ভাগাভাগি নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা সমাধানের চেষ্টা করে থাকে।

আরও পড়ুন

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত পশ্চিমের নদী সিন্ধু, ঝিলম, চেনাবে উল্লেখযোগ্য জলাধার নির্মাণ করতে পারবে না এবং পানি অবশ্যই নির্ধারিত স্তরে রাখবে, যেন ভাটিতে বন্যা বা পাকিস্তানের কৃষিকাজে কোনো ক্ষতি না হয়।

যদিও পাকিস্তান একাধিকবার ভারতের বিরুদ্ধে অভিন্ন নদীগুলোর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো বদলানোর অভিযোগ করেছে। যদিও ভারত বলেছে, প্রকল্পগুলো কার্যকর রাখতেই এগুলো করা হয়েছে।

‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘যদি ভারত সিন্ধু নদীর পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তবে তাকে পুরোপুরি আইডব্লিউটি চুক্তি উপেক্ষা করতে হবে। চুক্তির বর্তমান শর্তে তা সম্ভব নয়।’

পেহেলগাম হামলার পর কয়েকটি সূত্র দ্য হিন্দুকে জানিয়েছে, এখন ওই চুক্তির আওতায় ভারত এমন কিছু বিকল্পের কথা বিবেচনা করছে, যা আগে কখনো ভাবেনি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন