ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর নিয়ে কে কী বললেন

প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয়েছিলফাইল ছবি: রয়টার্স

লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে গতকাল সোমবার ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষ করে দেশটির রাজনৈতিক নেতারা পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

অধিকারকর্মী ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আইনটি ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয়। চার বছর পর আইনটি কার্যকরে বিজ্ঞপ্তি জারি করল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

আরও পড়ুন

আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব সংখ্যালঘু (হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মী) সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, যোগ্য ব্যক্তিরা অনলাইনে আবেদন জমা দিতে পারবেন। ভারতের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, আবেদনকারীদের কাছ থেকে অন্য কোনো নথিপত্র চাওয়া হবে না।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির একটি প্রধান নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার বিষয় ছিল সিএএর বাস্তবায়ন।

প্রায় এক মাস আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, সিএএ অবশ্যই কার্যকর করা হবে। লোকসভা নির্বাচনের আগেই তা কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন

অমিত শাহর এমন বক্তব্যের পর গতকাল সিএএ চালু হলো।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, সিএএ কার্যকর করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথ। একে ‘মানবিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেন তিনি। তাঁর ভাষ্যমতে, এ সিদ্ধান্তটি মানুষকে অত্যন্ত খুশি করবে।

সিএএর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিএএ কার্যকর করার পরই এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, মানুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক যেকোনো কিছুর বিরোধিতা করবে তাঁর সরকার। বৈষম্যমূলক কিছু তাঁরা মানবেন না। সেটা ধর্ম, বর্ণ বা ভাষাগত—যা-ই হোক। বিজেপি দুই দিনে কাউকে নাগরিকত্ব দিতে পারবে না। এটা শুধুই ‘ললিপপ’ ও ‘শো-অফ’।

আরও পড়ুন

বিজেপির সমালোচনা করে মমতা বলেন, লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন কয়েক আগে সিএএ কার্যকর করায় বোঝা যায়, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে লোকসভার নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার এখন সিএএ কার্যকর করেছে।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এই আইন কার্যকর না করার অঙ্গীকার করেছেন ডিএমকে প্রধান।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিএএ কার্যকর করায় কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে কেজরিওয়াল বলেন, ১০ বছর ধরে দেশ শাসন করার পর মোদি সরকার লোকসভা নির্বাচনের আগে সিএএ কার্যকর করেছে। তারা এমন সময় সিএএ কার্যকর করল, যখন দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা মূল্যস্ফীতির কারণে কাতরাচ্ছে। বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এই বাস্তবিক সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে বিজেপি সিএএ কার্যকর করেছে।