সেনাবাহিনীর অনুরোধে মণিপুর নিয়ে প্রতিবেদন করে উল্টো বিপদে সাংবাদিকেরা
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনুরোধে সরেজমিন মণিপুর রাজ্যের সহিংসতার প্রতিবেদন করে রাজ্য সরকারের রোষানলে পড়েছেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও তিন সাংবাদিক। তবে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, ওই চারজনের বিরুদ্ধে মণিপুর সরকার আরও দুই সপ্তাহ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এই সময়ের মধ্যে রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ছড়ানো ও শত্রুতা বাড়ানো কী করে এডিটরস গিল্ডের পেশ করা প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হতে পারে।
গত শুক্রবার এই মামলার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ বলেন, কোনো প্রতিবেদনে ভুল তথ্য থাকতেই পারে। অসত্য বিবৃতিও থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে সেই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা বাড়ানো বা হিংসা ছড়ানো—সে কথা বলা যায় না।
বেঞ্চ বলেন, দেশে প্রতিদিন সাংবাদিকেরা অনেক অসত্য প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাই বলে কি সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে? প্রধান বিচারপতি বলেন, মতামত প্রকাশ করার অধিকার সাংবাদিকদের আছে। এখানে তাঁরা একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার মামলা করেছে। কী করে ও কেন ওই অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, তা জানানো হোক। দুই সপ্তাহের মধ্যে এডিটরস গিল্ডের চারজনের বিরুদ্ধে বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
মণিপুরের সহিংসতা সরেজমিন তদন্ত করে দেখতে এডিটরস গিল্ড তিনজন সাংবাদিককে দায়িত্ব দিয়েছিল। তাঁদের মণিপুরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তারাই নিরপেক্ষ প্রতিবেদনের জন্য এডিটরস গিল্ডকে অনুরোধ করেছিল। তিন সাংবাদিক সীমা গুহ, ভারত ভূষণ ও সঞ্জয় কাপুর ৭ থেকে ১০ আগস্ট মণিপুরে ছিলেন। রাজ্যে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা ওই প্রতিবেদন তৈরি করেন।
ওই প্রতিবদেনে বলা হয়, রাজ্য সরকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। হিংসা দমাতে ও সংঘর্ষ এড়াতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, তার সমালোচনাও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, অনুগত সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে দিনের পর দিন একপেশে খবর করানো হয়েছে, যার ফলে হিংসা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বয়ানে ওই প্রতিবেদনে যা প্রকাশিত হয়, তাতে ক্ষুব্ধ হয় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ও কেন্দ্রীয় সরকার।
এরপরেই এডিটরস গিল্ডের সভাপতি সীমা মুস্তাফা ও ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাজ্যে দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়। রাজ্য সরকার চারজনকে গ্রেপ্তার করার ছক কষেছিল। শেষ পর্যন্ত চার সাংবাদিক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। এফআইআর খারিজের আবেদন জানান। তাঁদের রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
রাজ্য সরকারের পক্ষে বলা হয়, মণিপুরের হিংসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। তারা ভালো কাজও করছে। এ অবস্থায় এ ধরনের প্রতিবেদন সমস্যা বাড়ায়। কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তা নতুনভাবে জারি করতে হয়েছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, এফআইআর খারিজ না করে মামলাটা দিল্লি হাইকোর্টকে বিবেচনার জন্য পাঠানো হোক।