বান্ধবীর নাম দিয়ে বাড়ির নাম রেখেছিলেন মন্ত্রী পার্থ
দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মালিকানাধীন একের পর এক বাড়ির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি বাড়ি পাওয়া গেছে, যার নামকরণ হয়েছিল বান্ধবী ও নিজের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে।
এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সরকারি গাড়িটি ফেরত দেওয়া হয়েছে। চালক নিজে রাজ্যের বিধানসভায় গাড়িটি ফেরত দিয়ে আসেন। এদিন পার্থ ও তাঁর সহকারী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মালিকানাধীন আরও দুটি বাগানবাড়ির সন্ধান পেয়েছে ইডি।
২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। তখনই তাঁকে গাড়িটি দেওয়া হয়েছিল। পরিষদীয় মন্ত্রী হিসেবে পার্থ এ গাড়ি পেয়েছিলেন। ২০১১ সালে বামফ্রন্টকে অপসারণ করে মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় রয়েছেন পার্থ। আর ব্যবহারও করছেন এ গাড়ি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎই গাড়ির চালক গাড়িটি বিধানসভার কর্মকর্তাদের হাতে জমা দিয়ে আসেন। একই দিনে ওই গাড়ির ১২ জন নিরাপত্তারক্ষীকেও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আরও দুটি বাগানবাড়ির সন্ধান
গতকাল আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পার্থ ও তাঁর সহকারী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আরও দুটি বাগানবাড়ির সন্ধান পেয়েছে। বাড়ি দুটি রয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়। একটি বারুইপুরে ধাপাগাছি বাগানবাড়ি আর অন্যটি বেগমপুরের বিশ্রামবাড়ি। বাড়ি দুটির নাম ‘বিশ্রাম’ ও ‘ইচ্ছা’। বিশ্রাম বাগানবাড়িটি কিনেছিলেন মেয়ে সোহিনীর নামে। এ দুটি বাড়িতে অর্পিতাকে নিয়ে নিয়মিত আসতেন পার্থ। বিকেল বা সন্ধ্যায় এলেও সে সময় তাঁরা রাত কাটাতেন। ইডি সূত্রে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাতটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।
এদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় অর্পিতার মামাবাড়ি হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় যেতেন। সেখানেও তিনি বানিয়েছিলেন একটি বাড়ি। সেখানে তিনি পুকুরের মাছ ধরতেন। রাত কাটাতেন। এ ছাড়া আরও একটি বাড়ি রয়েছে ‘অপা’ নামে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, অর্পিতা ও পার্থর নামের আদ্যক্ষর অর্থাৎ ‘অ’ ও ‘পা’ মিলিয়ে হয়েছে ‘অপা’ নামটি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে টানা ২৭ ঘণ্টা জেরা করার পর গত শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করে ইডি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব। তাঁকে গ্রেপ্তার করার আগে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে ইডি। অর্পিতা পার্থর সহকারী বলে জানিয়েছে ইডি। অর্পিতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ কোটি রুপি জব্দ করেন ইডি কর্মকর্তারা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আগে বেসরকারি একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।
পার্থ-অর্পিতা এখন ইডির হেফাজতে আছেন। গত সোমবার জামিনের আবেদন খারিজ করে আদালত তাঁদের ১০ দিনের জন্য ইডির হেফাজতে পাঠিয়েছে।
ইডি এখন এই দুর্নীতি মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাজ্যজুড়ে দাবি উঠেছে, অবিলম্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো এই রাজ্যের শিল্প, বাণিজ্যসহ পরিষদীয় মন্ত্রী। আগে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর মমতা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘ওর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আমার কোনো কথা থাকবে না। চাই দ্রুত বিচার হোক।’ তবে মমতা এখনো পার্থকে শিল্প ও বাণিজ্য এবং পরিষদীয় মন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করেননি।