বাল্যবিবাহ ঠেকাতে আসামে অভিযান, আটক তিন হাজারের বেশি

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

পিংকু দাস সরকারের (ছদ্মনাম) বয়স ১৫ বছর। বাড়ি ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের রাধানগরে। গত বছর পিংকুর বিয়ে হয়। আর এ বছর সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে পিংকু দাস নিজেকে নিয়ে যতটা না উদ্বেগে ভুগছে, তার চেয়েও বেশি উৎকন্ঠিত নিজের স্বামীকে নিয়ে। বাল্যবিবাহ করার অপরাধে গত ২ ফেব্রুয়ারি পিংকু দাসের স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।

শুধু পিংকু দাসের স্বামী নন, আইন অমান্য করে বাল্যবিবাহ করার অপরাধে গত এক মাসে আসামে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে কাজী, ইমাম, পুরোহিতেরাও রয়েছেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আসামে পুলিশের বিশেষ অভিযান ও ব্যাপক ধরপাকড় চলছে।

পিংকু দাস বলেন, ‘তখন রাত ১১টা বাজে। আমরা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বাড়িতে চারজন পুলিশ আসে। আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। আমি বুঝতে পারিনি কি ঘটছে। পরে সারারাত কেঁদেছি।’

পিংকুর স্বামীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। বয়স ২৬ বছর। আখের রস বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পিংকুর স্বামী। স্বামী জেলে থাকায় এখন উপার্জন বন্ধ। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে পিংকুর। পিংকু বলেন, ‘আমি আসলেই জানি না এখন কি করবো।’

ভারতে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ। তবে আইন করেও বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের প্রায় এক–চতুর্থাংশ মেয়ের বয়স ১৮ হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আসামসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ধরপাকড় চলছে।

এই বিষয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালে আসামে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান অব্যাহত রাখবে রাজ্য সরকার। চলবে ধরপাকড়।

তবে পুলিশের বিশেষ এই অভিযান নিয়ে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। আসাম কংগ্রেসের নেতা গৌরব গগৈ বলেন, এই অভিযান একটি প্রহসন মাত্র। এক যুগের পুরাতন অভিযোগ সামনে এনে খোঁজখবর না নিয়েই গণগ্রেপ্তার করছে পুলিশ। বর্তমান রাজ্য সরকারের, বিশেষত মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বাড়াতে এই কাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন