অমিত শাহর দাবি ‘মমতার উসকানিতে গুলি’, মমতা বললেন ‘গণহত্যা’

পঞ্চম দফার ভোট সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে, ১১ এপ্রিল
ছবি: এএনআই

পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ দফার ভোটের দিনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে হতাহতের ঘটনা নিয়ে এখনো চলছে কথার লড়াই। আজ রোববার নির্বাচনী জনসভায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উসকানিতে শীতলকুচিতে প্রাণ ঝরেছে। অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বলেছেন, এ ঘটনা গণহত্যার শামিল।

গতকাল শনিবার ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ। আগের তিন দফা শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও এদিন সকাল সকাল বিভিন্ন আসনে সংঘর্ষ বাধে। রক্ত ঝরে শীতলকুচিতে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে এখানে প্রাণ হারান সামিউল মিয়া (২১), হামিদুল মিয়া (২২), মনিরুজ্জামান মিয়া (২৩) ও নূর আলম মিয়া (২২)। মমতার দাবি, তাঁরা সবাই তৃণমূলের কর্মী ছিলেন। এ ছাড়া এদিন আনন্দ বর্মণ (২১) নামের আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি বিজেপি কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

হতাহতের এ ঘটনায় পরস্পরকে দুষছে বিজেপি–তৃণমূল। আজ রোববার নির্বাচনী প্রচারে আবারও পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন অমিত শাহ। দুপুরে রোড শো করেন নদীয়া জেলার শান্তিপুর ও রানাঘাটে। এরপর তিনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে এসে যোগ দেন নির্বাচনী জনসভায়। এ সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শীতলকুচির ঘটনায় তোপ দাগেন মমতার দিকে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার উসকানি দিয়েছেন মমতা। এখন তিনি এ মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। এ চারজনের মৃত্যু নিয়ে কি মমতা দিদির কোনো দায় নেই? এ ঘটনার জন্য তাঁকে (মমতা) রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

আরও পড়ুন

জনসভায় অমিত শাহ আরও বলেন, দিদির বিদায়ের সময় এসে গেছে। আগামী ২ মে তিনি মহাসমারোহে বিদায় নেবেন। রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। ২০০–এর বেশি আসন পেয়ে বাংলায় ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। আর বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হবে।

হুইলচেয়ারে বসেই একের পর এক নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলপাইগুড়ি জেলায়, ১১ এপ্রিল
ছবি: এএনআই

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এবার আট দফায় ভোট হচ্ছে। এরই মধ্যে চার দফায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আরও চার দফার ভোট শেষে আগামী ২ মে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে।

গণহত্যার দাবি মমতার

শীতলকুচির ঘটনাকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চম দফার ভোট সামনে রেখে আজ তিনি জলপাইগুড়ি জেলার চালসায় এক নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন। এ সময় ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘এটা আমার জীবনে দেখা অন্যতম গণহত্যা। নন্দীগ্রামের মতো এখানেও গণহত্যা চালানো হয়েছে।’
গতকাল ঘটনার পরপরই শীতলকুচি যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মমতা। আজ তাঁর সেখানে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। তবে রাতেই নির্বাচন কমিশন শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে কোচবিহারে বাইরে থেকে যেকোনো দলের রাজনীতিকদের প্রবেশে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে পরিকল্পনা বদলাতে হয় মমতাকে।

আরও পড়ুন

আজ তিনি ভিডিও কলে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় মমতা নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। জানিয়ে দেন, তিন দিন পর তিনি শীতলকুচিতে গিয়ে নিহত তৃণমূল কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে মমতা নিহত বিজেপি কর্মী আনন্দ বর্মণের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাননি। আর্থিক সহায়তাও দেননি।

দিলীপ ঘোষের হুমকি

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুমকি দিয়ে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে। আজ কলকাতার বরাহনগরে বিজেপির এক জনসভায় অংশ নেন দিলীপ। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘চার দফার ভোট বাকি। তা হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই। যাঁরা ভেবেছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুকটা শুধু দেখানোর জন্য, তাঁরা এবার বুঝে গেছেন ভেতরের গুলির কত জোর?’ দিলীপের এমন হুমকিতে সমালোচনার ঝড় বইছে রাজ্যজুড়ে।

আরও পড়ুন