‘আম–ছালা দুটোই গেল’ পরিস্থিতিতে তৃণমূলত্যাগী অনেক নেতা

তৃণমূল ও বিজেপি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হুড়মুড় করে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন একঝাঁক নেতা। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পর দলটিতে এখন ভাঙনের সুর।

নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা নেতারা এখন আগের দলে ফিরতে চাইছেন। এ জন্য তাঁরা তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আরজি জানাচ্ছেন। তবে সবাইকে দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সায় দেননি মমতা।

দলত্যাগী সব নেতাকে ফেরানোর ব্যাপারে মমতার যে সায় নেই, তা ইতিমধ্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন। মুকুল রায়কে দলের ফেরার সুযোগ দিয়ে অন্যদের ব্যাপারে মমতা বলেছেন, যাঁরা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলের বিরোধিতা করেছেন, কুৎসা রটিয়েছেন, তাঁদের আর দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না।

একই দাবি উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের তৃণমূল পর্যায় থেকেও। নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল থেকে অনেক নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের আঞ্চলিক নেতারা এখন বলছেন, যাঁরা দল ছেড়ে গেছেন, তাঁরা বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতকদের আর দলে ঠাঁই দেওয়া চলবে না।

পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারঝড় তুলেছিল বিজেপি। এ প্রচারে অংশ নিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারাও ছুটে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে।

রথী-মহারথীদের প্রচারঝড়ের মুখে কেন্দ্রীয়-স্থানীয় পর্যায়ের বহু তৃণমূল নেতা দল ত্যাগ করে বিজেপিতে ভেড়েন। তাঁরা মনে করেছিলেন, রাজ্যে বিজেপির দিন আসছে। বিজেপিই নির্বাচনে জয়ী হতে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাঁরা দল বেঁধে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

যদিও জনমত সমীক্ষায় বারবার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে শেষ বিজেপি নয়, জিতবে তৃণমূলই। ফলাফলে দেখা যায়, রাজ্যে বিপুল ব্যবধানে তৃণমূলের কাছে হেরেছে বিজেপি।

রাজ্যে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখা বিজেপি নির্বাচনের ফলাফলে দারুণভাবে হতাশ হয়। অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে দলটি। হালুয়া-রুটির লোভে যাঁরা বিজেপিতে ভিড় করেছিলেন, তাঁদেরও অনেকের মোহ ভঙ্গ হয়। ফলে তাঁরা এখন ‘ঘরের ছেলে হয়ে ঘরে’ ফিরতে উদ্‌গ্রীব।

এই যেমন মুকুল রায়। তিনি তৃণমূল প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগর ছিলেন। তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সহসভাপতির পদ পান। নির্বাচনের পর তিনি তৃণমূলে ফিরতে চান। মমতাও তাঁকে বিশেষ যুক্তিতে ফিরিয়ে আনেন।

১১ জুন মমতা বলেন, মুকুল ভালো মানুষ। তৃণমূল ছেড়ে তিনি বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি বেফাঁস শব্দও উচ্চারণ করেননি। তাই মুকুলকে ফিরিয়ে নেওয়া হলো। মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায়কেও দলে ফিরিয়েছেন মমতা।

তৃণমূলে ফেরার পর মুকুল রায় তাঁর অনুগত লোকজনকে দলে ফেরার ডাক দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে বিজেপি বা তৃণমূলের কোনো নেতাই মুখ খোলেননি।

এদিকে, তৃণমূল থেকে যেসব নেতা বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথার ঝড় তুলেছিলেন, তাঁদের আর দলে ফিরিয়ে নেবে না বলে মমতা ঘোষণা দিয়েছেন। তা ছাড়া এসব নেতাকে দলে না ফেরাতে মমতার ওপর তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের চাপ রয়েছে।

মমতার এমন অবস্থানে অনেকটা ‘আম–ছালা দুটোই গেল’ পরিস্থিতিতে পড়েছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া অনেক নেতা। কারণ, প্রথমত তাঁরা বিজেপিতে গিয়ে ক্ষমতার মধুর ভাগীদার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় আবার তৃণমূলে ফিরে আগের অবস্থান ফেরত পাওয়ার আশায় দিন গুনছিলেন তাঁরা। এখন তাঁদের এই আশাও ঝুলে গেছে।

তৃণমূলে ফিরতে চাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন দলটির সাবেক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধাননগর পৌরসভার সাবেক মেয়র সব্যসাচী দত্ত। এ ছাড়া আছেন সোনালী গুহ, বিশ্বজিৎ দাস, সুনীল সিং, প্রবীর ঘোষাল, দিব্যেন্দু বিশ্বাস, সরলা মুর্মু, বাচ্চু হাসদা প্রমুখ। তাঁরা মমতার কাছে ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার আরজি জানিয়ে এখন পর্যন্ত বিফল হয়েছেন।

ফের দলত্যাগে ইচ্ছুক নেতাদের সম্পর্কে রাজ্য বিজেপিও অবগত। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ গতকাল রোববার বলেছেন, ‘যেসব নেতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে যেতে চাইছেন, তাঁদের ব্যাপারে আমরা আপত্তি করছি না। তাঁদের নিয়ে আমরা চিন্তিতও নই। একটা ঢেউয়ে ওরা এসেছিল, আবার আর একটা ঢেউয়ে ওরা ফিরে যেতেই পারে।’

দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘জীর্ণ পাতা গাছের কোনো কাজে লাগে না। জীর্ণ পাতা ঝরে গেলে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। গাছ নতুন পাতায় ভরে ওঠে। তাই বলছি, ওরা ফিরে গেলেও বিজেপির ক্ষতি হবে না। প্রকৃত বিজেপিরা বিজেপিতেই থাকবে।’