আল-কায়েদার জঙ্গি নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

কলকাতায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আদালতে তোলা হয়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার সন্দেহভাজন ৬ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে পারস্পরিক দোষারোপ। বিরোধী দলগুলো চড়াও হয়েছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের ওপর। পাল্টা জবাব এসেছে শাসক দলের পক্ষ থেকেও।

ভারতের কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে গতকাল শনিবার ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)। সংস্থাটি বলে, গ্রেপ্তার হওয়ার ব্যক্তিরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার সদস্য। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মুর্শিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস, মোশারফ হোসেন, নাজমুস সাকিব, আবু সুফিয়ান, মাইনুল মণ্ডল, লিও ইয়েন আহমেদ, আল মামুন কামাল ও আতিউর রেহমান।

এভাবে আল কায়দা জঙ্গিদের রাজ্যব্যাপী তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে রাজ্যের সাধারণ মানুষও। তাঁদের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গে এভাবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর ভাবাদর্শে গড়া আল-কায়েদার বাড় বাড়ন্ত হলো কেন। কেন রাজ্য সরকার এই জঙ্গি তৎপরতা রোধ করতে পারেনি?

এই জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়ে বলেছেন, ‘বাংলা ও কেরলে দেশবিরোধী কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি। বাংলা ও কেরল সরকার এই দেশবিরোধী কাজে জঙ্গিদের আশ্রয় ও মদদ দিচ্ছে। এটা এখন রাজ্যের শাসক দলের রেসিপি।’

দিলীপ ঘোষ আরও বলেছেন, বাংলায় মাওবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের গতিবিধিকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিততে মরিয়া তৃণমূল সরকার। জাতীয় নিরাপত্তার পরিবর্তে ভোট রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ায় এই হাল হয়েছে। আজ মুর্শিদাবাদ জঙ্গিদের আঁতুড় ঘর হয়ে উঠেছে। জঙ্গিদের রুখতে রাজ্য প্রশাসন ব্যর্থ।’

দিলীপ ঘোষের উত্তরে তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের পৌর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘উত্তর প্রদেশে ৮ জন পুলিশ কর্মীকে গুলি করে মারা হলো। তাহলে ওই রাজ্য কি টেররিস্ট রাজ্য নয়? মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের তো আগেই ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল।’

বসে নেই এই রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। তিনি বলেছেন, ‘এই রাজ্য এখন বোমা তৈরির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। এতে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। এ রাজ্যেতো এখন সরকার ও পুলিশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে রুখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

রাজ্যপালের মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। বলেছেন, ‘ওনারতো সাংবিধানিক প্রধান থাকার অধিকার আছে কিনা সেই প্রশ্ন এখন উঠে এসেছে। রাজ্যপালের কাছে সব রাজনৈতিক দল সমান হওয়া উচিত।’

আর এই প্রসঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ও মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘জঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার।

খাগড়াগড়েই তা প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশের ওপর এই রাজ্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে পুলিশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠন বাড়ছে।’ আর বাম দল সিপিএমের বিধানসভার পরিষদীয় দলের নেতা ও সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, এখানেতো একটা জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়লে অন্য জঙ্গিদের কার্যকলাপ বাড়ে। কারণ তারা সুযোগ পেয়ে যায়। তারই ছবি এখন এই রাজ্যে।’