কাশ্মীর নিয়ে নতুন উদ্যোগ, সর্বদলীয় বৈঠক

রাজ্য দ্বিখন্ডিকরণ ও সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের প্রায় দুই বছর পর কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু–কাশ্মীরে রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টিতে নতুন পদক্ষেপ নিতে চলেছে। আগামী বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পূর্বতন এই রাজ্যের স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দলের এক বৈঠক ডাকা হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, দ্বিধাবিভক্ত রাজ্যের বিধানসভার নতুন সীমানা নির্ধারণসহ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হবে।

ফারুখ আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি
রয়টার্স ও এএফপি ফাইল ছবি

জম্মু–কাশ্মীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর তোড়জোর কদিন ধরেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের রাজনৈতিক দলগুলির নতুন জোট গুপকর অ্যালায়েন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর আলোচনা তাঁরা এড়িয়ে যাবেন না।

রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গেও ফারুক আবদুল্লা এই বিষয়ে কথা বলেন। কেন্দ্রের সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার খবর সংবাদ মাধ্যমকে দিয়েছেন মেহবুবাই। তিনি বলেন, ২৪ জুন তাঁকে দিল্লিতে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ওই বৈঠক নিয়ে কিছু বলা হয়নি। খবরের বিরোধিতাও করা হয়নি।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
ফাইল ছবি

শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জম্মু–কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা অজিত দোভাল ও নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। বৈঠক সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করে জানান, উন্নয়নের কাজ ত্বরাণ্বিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। সে দিকে নজর রেখে সব মহলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জম্মু–কাশ্মীর কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় রয়েছে তিন বছর ধরে। প্রায় দুই বছর আগে, ২০১৯ সালের আগস্ট, মাসে রাজ্য দ্বিখন্ডিত করে গড়ে তোলা হয় দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখ। সেই সঙ্গে খারিজ করা হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ যা জম্মু–কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। সেই থেকে ওই রাজ্যের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত। যদিও আগের তুলনায় বর্তমানে বিক্ষোভের সংখ্যা কম। সন্ত্রাসী হানা ও মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রয়ে গেছে বহু বিধিনিষেধ। ৪জি ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়নি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। এই অবস্থার মধ্যে প্রচুর পুলিশি প্রহরায় অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে উপত্যকার সব রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়ে গড়ে তোলে গুপকর অ্যালায়েন্স। এখন কেন্দ্র চাইছে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার কেন্দ্র ভিত্তিক সীমানা নতুন করে নির্ধারণের পর ভোট গ্রহণ করাতে যাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে প্রশাসনিক ভার তুলে দেওয়া যায়। এই সঙ্গে জম্মু–কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হবে। বস্তুত, রাজ্য দ্বিখন্ডিকরণের সময় থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে আসছেন, ঠিক সময়ে জম্মু–কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাওয়া কাশ্মীরের সপ্তদলীয় জোট গুপকর অ্যালায়েন্সের অন্যতম দাবি। যে প্রক্রিয়ায় রাজ্য দ্বিখন্ডিত ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছিল, এই জোট তারও বিরোধী। কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও শুনানি এখনো শুরু হয়নি। উপত্যকার নতুন রাজনৈতিক জোট তবু নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে চায় না। তারা মনে করে, ভোট বয়কট করা হলে কেন্দ্রীয় সরকার একটা বাড়তি অস্ত্র পেয়ে যাবে। সরকারি ইচ্ছা কায়েমে সুবিধা হবে। সেই কারণে গুপকর অ্যালায়েন্স জেলা উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাচনে জোট অংশ নিয়েছিল এবং সিংহভাগ আসনও দখল করে। জোট নেতারা মনে করেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।

কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের চাপও রয়েছে ভারতের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেননি। কিন্তু পালাবদলের পর বাইডেন প্রশাসন উপত্যকার স্বাভাবিকতা ফেরনো ও মানবাধিকার নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। সেই সমালোচনা বন্ধ করাও নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।