পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন: করোনাবিধি ভাঙায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট, কঠোর কমিশন

কলকাতা হাইকোর্ট
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে করোনাবিধি ভাঙায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন কলকাতার হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশনের ভর্ৎসনার পর কমিশন আরও কঠোর হয়েছে। করোনাবিধি ভাঙালে সঙ্গে সঙ্গে মামলা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

করোনার আবহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভার ২৯৪ আসনের নির্বাচন চলছে। ইতিমধ্যে আট দফা নির্বাচনের মধ্যে ছয় দফার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুই দফায় ২৬ ও ২৯ এপ্রিল ৭১টি আসনে ভোট হবে।

গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ করোনাবিধি না মেনে নির্বাচনী প্রচার চালানোয় ভর্ৎসনা করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। এরপরই নির্বাচন কমিশন রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারে রাশ টানে। ঘোষণা দেয়, পরবর্তী শেষ দুই দফার নির্বাচনে কোনো দলই আর প্রকাশ্যে প্রচার, রোড শো ও জনসভা করতে পারবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোদি ও মমতা এবং বাম দল ও কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করে দেয়।

হাইকোর্টের এই ভর্ৎসনার জেরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। কমিশন নির্দেশ দেয়, করোনাবিধি ভাঙলে এবার আর কাউকে ছাড় নয়। দায়ের করতে হবে মামলা। এই ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার আরিজ আফতাব, রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জগমোহন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসার অশ্বিনী কুমার সিং, রাজ্যে নিয়োজিত দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক ও বিবেক দুবে উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল নির্বাচন কমিশন জানায়, করোনাবিধি না মেনে নির্বাচন প্রচারে অংশ নেওয়া এবং নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ১৩ জন প্রার্থী ও নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। একই সঙ্গে ৩৩ জন নেতাকে শোকজ করেছে। সামনের দুই দফায় মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার নির্বাচন। এসব এলাকার নির্বাচনী সহিংসতার অতীত ইতিহাস আছে। তাই এই নির্বাচনে অশান্তি হতে পারে মনে করে কমিশন। সেদিকে লক্ষ রেখে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তর
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

নির্বাচন কমিশন থেকে আরও জানা গেছে, ইতিমধ্যে ছয় দফা পর্যন্ত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে ২ হাজার ৭৯২টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। ৩ হাজার ৯৫ কেজি বিস্ফোরক, ৭৫০টি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৮১টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি ৭৯ হাজার ১২ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব নিয়ে ৪০ হাজার ১৮২টি মামলা দায়ের হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে একটি হলফনামা দিয়েছে। হলফনামা গ্রহণ করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সাধারণ মানুষকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে নির্বাচন কমিশনকেই সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর গতকাল জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৭৬ জন। মারা গেছেন ৫৯ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৭৮ জন। এখন এই রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ৭৪ হাজার ৭৩৭ জন। সব মিলিয়ে এখন এই রাজ্যে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৭৮০। মারা গেছেন ১০ হাজার ৮২৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৮৩০ জন আর মারা গেছেন ১৭ জন।