মোদিবিরোধীদের এক মঞ্চে আনলেন মমতা

শহীদ দিবসের আয়োজনে ভাষণ দেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায়, ২১ জুলাই।
ছবি: এএনআই

ভারতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতাকারী রাজনীতিকদের এক মঞ্চে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য আগামী সাধারণ নির্বাচনে মসনদ থেকে মোদিকে হটানো। সেই লক্ষ্য পূরণে এখনই বিজেপি ও মোদিবিরোধী জোট গড়ার আহ্বান তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার। এর মধ্য দিয়ে পুরো ভারতের বিজেপিবিরোধী রাজনীতিকেরাও কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন, মোদির বিরুদ্ধে লড়তে তাঁরা মমতার নেতৃত্ব ধীরে ধীরে মেনে নিচ্ছেন।  

আজ বুধবার ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস। ১৯৯৩ সালের এই দিনে পুলিশের গুলিতে দলটির কয়েকজন কর্মী নিহত হন। প্রতিবছরই এদিনে শহীদ দিবস পালন করেন মমতা। আজ শহীদ দিবসের আয়োজনে মোদিবিরোধী রাজনীতিকদের একসঙ্গে ডেকে তাঁদের উদ্দেশে ভাষণ দেন মমতা। যদিও মমতা ছিলেন কলকাতার কালীঘাটে। সেখানে বসেই তিনি ভাষণ দেন; যা ভার্চ্যুয়ালি প্রচার করা হয়। আর দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বসে মমতার ভাষণ শুনেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিকেরা।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ও মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। দিগ্বিজয় সিংকে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ারসহ বিজেপিবিরোধী কয়েকজন নেতা।

আরও পড়ুন

ভাষণে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদির তীব্র সমালোচনা করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বিজেপি আবার জিতে ক্ষমতায় এলে ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়া ভারতের যুক্তরাজ্য কাঠামো পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। গণতন্ত্রের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’

রাজনীতিক, বিচারপতি, অধিকারকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের ফোনে আড়ি পাতার ফাঁস হওয়া ঘটনার (পেগাসাস প্রজেক্ট) কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘এখন বিচারপতিদের ফোনেও আড়ি পাতা হচ্ছে। আপনারা (সুপ্রিম কোর্ট) স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিন। আমার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোরের ফোনে আড়ি পেতেছে। ফোনে আড়ি পেতে একটি দল নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভীষণ লজ্জার।’

আরও পড়ুন

পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে বিজেপিকে হটাতে হলে এখনই জোট গড়ার আহ্বান জানান মমতা। তিনি বলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোকে যদি জোট গড়তে হয়, তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আড়াই বছর আগে এখনই জোট করতে হবে। নির্বাচনের দোরগোড়ায় গিয়ে জোট বেঁধে কোনো লাভ নেই।

এ সময় নাম ধরে ধরে কংগ্রেসসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রশ্ন করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘চিদাম্বরমজি, আপনি কি জেলে যাওয়া থেকে বাঁচতে পেরেছেন? শরদ পাওয়ারজি, আপনি কি বাঁচতে পেরেছেন? আপনারা-আমরা কোনো দলই বিজেপির হাত থেকে বাঁচতে পারব না। বাঁচতে হলে সব দলকে এক হতে হবে। আমি এই মাসের ২৬ তারিখে দিল্লি যাচ্ছি। আপনারা বিজেপিবিরোধী দলগুলোকে একত্রিত করুন। বৈঠক ডাকুন।’

ভারতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালে। ওই নির্বাচনে মোদিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান মুখ মমতা। মনে করা হচ্ছে, আজকের ভাষণে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিরোধীদের এক মঞ্চে এনে জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

তৃণমূল নেত্রীর আজকের ভাষণ মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটসহ ছয়টি রাজ্যে বড় পর্দায় দেখানো হয়েছে। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বিজেপি-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায় তাঁর ভাষণ দেখাতে দেওয়া হয়নি।