লাদাখের পরিস্থিতি কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ: ভারতের সেনাপ্রধান

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারভানে।
ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর পরিস্থিতি ‘কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করলেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারভানে। বৃহস্পতিবার এ অঞ্চলের ‘ফরওয়ার্ড বেস’ ঘুরে লেহ্ ফিরে আজ শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সাবধানতামূলক সেনা মোতায়েন করেছি। তবে আমরা নিশ্চিত, আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। উত্তেজনা প্রশমন সম্ভব।’

পূর্ব লাদাখ অশান্ত সেই জুন মাস থেকে। গত ১৫ জুন ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে বিস্তীর্ণ এলএসিতে উত্তেজনা রয়েই গেছে। দুই পক্ষই মোতায়েন করেছে বাড়তি সেনা। ফরওয়ার্ড বেসে মজুত হয়েছে ট্যাংক। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবাহিনীকে। সদ্য আসা অত্যধুনিক ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান ঘাঁটি গেড়েছে জলন্ধরে। সেনাপ্রধান বারবার এসে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন। কিন্তু এই প্রথম সেনা প্রস্তুতি দেখার পর তিনি উত্তেজনা কমাতে ‘আলাপ–আলোচনার’ ওপর জোর দিলেন সেই সময়, যখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় ভারত ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই বৈঠকের আগেই সকালে সেনাপ্রধানের মন্তব্য তাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান গতকাল নিরাপত্তা ও যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। প্যাংগং লেকের দক্ষিণাঞ্চলে চীনা কৌশল বানচাল করে দিয়ে ‘কালা টপ’সহ উঁচু এলাকাগুলোয় কর্তৃত্ব কায়েমের ফলে ভারতীয় বাহিনীর মনোবল তুঙ্গে। সে কথার উল্লেখ করে জেনারেল নারভানে বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা যেকোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তৈরি। গোটা এলএসিতে ভারতীয় সেনা প্রস্তুত। মনোবল তুঙ্গে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের সেনারা দেশকে গর্বিত করবে।’

গত বৃহস্পতিবার জেনারেল নারভানে যখন লাদাখে এলএসি ঘুরে দেখছেন, সেই সময় দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে দেশের প্রতিরক্ষাপ্রধান (সিডিএস) বিপিন রাওয়াত জানিয়েছিলেন, শুধু চীন নয়, একই সময় পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের মোকাবিলা করার জন্যও ভারত প্রস্তুত।

গত শনি ও সোমবার প্যাংগং লেকের দক্ষিণে ভারতের হাতে চীনা আগ্রাসন ও প্ররোচনা বানচাল হয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম চীন সরব হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে এলএসি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে উত্তেজনা কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটা তারা করছে আচমকাই অসুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে বলে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বাহিনী চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবে শক্তির অবস্থানে থেকে, স্থিতাবস্থা বজার রাখার শর্তে।

প্যাংগং লেকের দক্ষিণে আচমকাই কর্তৃত্ব হারিয়ে চীন সেখানে সেনা ও ট্যাংক সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘কালা টপ’সহ আঞ্চলিক সব উঁচু জায়গার দখল ভারতের হাতে বলে চীনা সেনা সমাবেশ ও গতিবিধি নজরে এসেছে। প্রস্তুতি হিসেবে ভারতও তাই ‘টি–৯০’ ও ‘টি–৭২ এমআই’ ট্যাংক মজুত করেছে। নিয়ে যাওয়া হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের উপযুক্ত ‘১৫৫–এমএম’ হাউইৎজার দূরপাল্লার ‘বোফর্স’ কামান, যা কারগিলে ভারতের যুদ্ধজয়ের নায়ক।

গত জুন থেকে এ পর্যন্ত মোট ছয়বার দুই দেশের আঞ্চলিক কমান্ডাররা বৈঠক করলেও এলএসিতে উত্তেজনা কমেনি। চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীন স্থিতাবস্থা মেনে আগের অবস্থানে ফিরে যায়নি। প্যাংগং লেকের দক্ষিণে অসুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাওয়া চীন এখন স্থিতাবস্থা রক্ষার মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মস্কোয় সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে সে দেশে গেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সম্মেলনে উপস্থিত আছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উই ফেঙ্গে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ তিনিই দেখান। এখন দেখার বিষয়, সন্ধ্যায় সেই বৈঠক কেমন হয়। এই শহরেই এসসিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে আসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে কথা হবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও।