ইসরায়েলে ইরানের হামলার হুমকি বাস্তব: যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে যুক্ত করে সামরিক মহড়া চলাকালে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পাশে ইরানের পতাকা দেখা যাচ্ছে। ইরান, অক্টোবর ২০২০ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলে ইরানের হামলা এখন একটি ‘বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য’ হুমকি হয়ে উঠেছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। তেহরান শিগগির ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে শঙ্কার মধ্যে শুক্রবার এ কথা বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় দেশটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার নিহত হওয়ার পর থেকেই ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে উদ্বেগ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বিবিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএস নিউজকে বলেছেন, শিগগিরই ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা হতে পারে। ইসরায়েল বলেছে, আত্মরক্ষা ও আক্রমণ উভয় দিক দিয়েই প্রস্তুত রয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি শুক্রবার বলেছেন, ‘কোন আকারে, কোন মাত্রায় এবং কোন সুযোগ নিয়ে হামলা হতে পারে, তা আমি বলতে পারছি না।’ তবে ইরানের হামলার হুমকি ‘কার্যকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ‘খুব, খুব নিবিড়ভাবে বিষয়টি দেখছে।’

জন কারবি বলেন, ইসরায়েল যাতে এ ধরনের হামলায় নিজেদের সুরক্ষিত করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁরা নিয়মিত ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

সিবিএস নিউজের সঙ্গে কথা বলা যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে ইরান শতাধিক ড্রোন, কয়েক ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সম্ভবত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাতে পারে। ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এই হামলা হতে পারে।

ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরান পিছু হটতে পারে এমন সম্ভাবনাও এখনো আছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র
রয়টার্স (ফাইল ছবি)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ইরান হামলা চালালে ইসরায়েলকে ‘লৌহবর্মের’ মতো সহায়তা দিয়ে যাবেন তাঁরা।

ইরানের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নাগরিকদের ইসরায়েল ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে অবস্থানরত দেশটির কূটনীতিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের তেল আবিব, জেরুজালেম ও বীরশেবা এলাকার বাইরে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে।
এসব সতর্কতার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার তাঁর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

আরও পড়ুন

ইরানের হামলা চালানোর সম্ভাবনা ইসরায়েলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। তবে দেশটির সরকার এখনো জনগণের উদ্দেশে নতুন কোনো পরামর্শ দেয়নি।

অবশ্য ইসরায়েলি বেতারের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। হামলা হলে জনগণ নিজেদের সুরক্ষিত করতে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পাবে কি না, তা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।
ইরান পাল্টা হামলা চালাতে পারে—গত সপ্তাহে প্রথম এই ইঙ্গিত পেয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেনাসদস্যদের ছুটি বাতিল করে। সংরক্ষিত সেনাদের ডাকার পাশাপাশি তারা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ১ এপ্রিল হামলা চালায় ইসরায়েল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সাতজন সদস্য রয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আইআরজিসির বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইউনিট কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি রয়েছেন। তিনি সিরিয়া ও লেবাননে কুদস ফোর্সের কার্যক্রম পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন।

আরও পড়ুন

ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, ইসরায়েল ওই হামলা চালিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ইরানকে ইসরায়েলে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন। এই হামলা হলে তা আরও বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইতিমধ্যে চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেন তাঁরা তেহরানের ওপর দেশগুলোর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে হামলা না চালানোর বিষয়ে ইরানকে রাজি করেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য বলেছেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের’ নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁর সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের সঙ্গে বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইরানের হামলার হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, ‘কীভাবে জবাব দিতে হবে, তা আমরা জানি।’

ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় ছয় মাস ধরে যে হামলা চালিয়ে আসছে, তার সূচনা হয়েছিল গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালানো থেকে। তাদের ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০–এর বেশি মানুষ নিহত হন এবং ইসরায়েল থেকে ২৪০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, এখনো গাজায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছেন। আর অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।

অপর দিকে গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় ৩৩ হাজার ৬০০–এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এদিকে গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি হামলায় জড়াচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির উত্তর সীমান্ত অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইরাক ও ইয়েমেনের ইরানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীও ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। আর লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।

আরও পড়ুন