গাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে হত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর, যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দায় পোপ

উত্তর গাজায় ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ২০ জুলাই ২০২৫ছবি: রয়টার্স

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডটিতে গতকাল রোববার মানবিক সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে।

এদিকে গাজা যুদ্ধের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। একই সঙ্গে তিনি শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছানোর পর ৮০ জন নিহত হন। আর দক্ষিণে রাফার কাছে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর এক দিন আগে এই এলাকায় বহু মানুষ নিহত হন।

আরও পড়ুন

সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উপত্যকার দক্ষিণের খান ইউনিসের আরেকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে আরও ৪ জন নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তাদের খাদ্য বহনকারী ২৫টি ট্রাকের একটি বহর গাজা সিটির কাছে পৌঁছালে বিপুলসংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় লেগে যায়। এই ভিড়ের মধ্যে গুলি চালানো হয়।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিহতের সংখ্যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলেছে, গাজা সিটির কাছে হাজারো মানুষ জড়ো হলে সেনারা ‘তাৎক্ষণিক হুমকি প্রতিহত করতে’ সতর্কতামূলক গুলি চালান।

গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকটের কারণে মানুষ ত্রাণকেন্দ্রগুলোয় ভিড় করছেন। আর সেখানেই ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণহানি ঘটছে।

আরও পড়ুন
গাজা উপত্যকার একটি এলাকায় ত্রাণের জন্য জড়ো হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ২০ জুলাই ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের হিসাবে, গত মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা পর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ইসরায়েলে হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। সেদিন ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৮৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

গাজা সিটির হলি ফ্যামিলি গির্জায় আশ্রয় নেওয়া তিন ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার পোপ লিও চতুর্দশের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। নেতানিয়াহু দাবি করেন, ভুলবশত ছোড়া গোলাবারুদের আঘাতে এ ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল রোববার প্রার্থনার পর পোপ গাজায় চলমান যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দা জানান। তিনি শান্তির আহ্বান জানান। গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিন পর তিনি এ আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

পোপ বলেন, ওই হামলা ছিল গাজার বেসামরিক জনগণ ও প্রার্থনাস্থলগুলোর ওপর ধারাবাহিক সামরিক আক্রমণের অংশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার গাজার হলি ফ্যামিলি গির্জায় হামলা চালায় ইসরায়েল। গির্জাটির সঙ্গে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস নিয়মিত যোগাযোগ করতেন।

ঘটনার দিন জেরুজালেমের রোমান ক্যাথলিক নেতা গ্যাব্রিয়েল রোমানেল্লি জানিয়েছিলেন, গির্জায় হামলায় প্রাণহানি ছাড়াও অনেকে আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন