ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে তৎপরতা

  • ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও মিসর।

  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ইউরোপের কয়েকটি দেশের পরিকল্পনাও গতি পেয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় ধসে গেছে ভবন। ধ্বংসস্তূপে বসে আছেন কয়েকজন ফিলিস্তিনি। গতকাল গাজা উপত্যকার জেইতুনেছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার মধ্যেই যুদ্ধ–পরবর্তী গাজা কেমন হবে, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন আরব দেশগুলোর নেতারা। যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনে সহায়তার ক্ষেত্রে তাঁদের প্রধান শর্ত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি আদায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তাঁরা।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের এই তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও মিসর। দেশগুলো ইতিমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় আর্থিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের মূলে থাকবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনে এসব দেশের সহযোগিতা ও সমর্থন হয়ে উঠবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আরব নেতাদের মতে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করার মধ্য দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্যে উন্নয়ন-অগ্রগতির একটি পথ তৈরিতেও তা সহায়ক হবে। তবে তাঁদের এই পরিকল্পনায় প্রধান দুই বাধা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোর বিরোধী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল সরকার।

আরও পড়ুন

গত মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বৈঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে ফিলিস্তিনের সঙ্গে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। সত্যিকারের একটি রাজনৈতিক সমাধান ব্যতীত যুদ্ধ–পরবর্তী গাজা নিয়ে কথা বলা আরব দেশগুলোর জন্য কঠিন হবে।’ আজ থেকে বাহরাইনে শুরু হবে আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতেও গাজা মূল বিষয় হিসেবে থাকবে বলে জানা গেছে।

এসব আলোচনা সম্পর্কে জানেন, এমন এক আরব কূটনীতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে মূলত দুটি বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছেন আরব নেতারা। সেগুলো হলো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘এ নিয়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন আরব নেতারা। কিন্তু গাজায় জোরালো হামলা ও নেতানিয়াহুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

আরব নেতারা চান, যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর ও গাজায় পৃথক প্রশাসন থাকবে না। সমন্বিতভাবে একটি সরকার গঠন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে। গত মঙ্গলবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি বলেন, ‘আমরা পুরো ফিলিস্তিনে একক সরকারে বিশ্বাসী। আর সেই সরকার পশ্চিম তীর ও গাজা দুটি অঞ্চলেরই দায়িত্বে থাকবে।’

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ইউরোপের কয়েকটি দেশের পরিকল্পনাও গতি পেয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে স্পেন, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা ও স্লোভেনিয়া। গতকাল আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন জানিয়েছেন, চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তাঁর দেশ।

গাজাজুড়ে ব্যাপক লড়াই

গতকাল গাজার উত্তর ও দক্ষিণ দুই অঞ্চলেই ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের ব্যাপক লড়াই হয়েছে। হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিরোধের লড়াইয়ে গাজার ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারাও অংশ নেন। এদিকে অবিলম্বে রাফা অভিযান বন্ধের আহবান জানিয়েছে ইইউ।

গত মঙ্গলবার রাত থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলের জনবহুল এলাকাগুলোতেও ট্যাংক নিয়ে নতুন করে জোরালো হামলা চালাতে শুরু করেন ইসরায়েলি সেনারা। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে অসংখ্য বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেন ইসরায়েলি সেনারা। এতে দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণের রাফায় গতকাল অভিযান চালিয়েছে তারা।

গতকাল সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলছে, বিগত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রাণহানি হয়েছে এদিন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৩৫ হাজার ২৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন।

ইসরায়েলে আরও অস্ত্র পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলকে আরও ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতাকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কংগ্রেসের তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি গতকাল এ তথ্য জানায়। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে নতুন করে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের ট্যাংকের গোলা, ৫০ কোটি ডলারের কৌশলগত সামরিক যান ও ৬ কোটি ডলারের মর্টারের গোলা পাঠাবে বলে জানিয়েছে এসব সূত্র।