গাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা মরিয়া হয়ে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। গাজা উপত্যকার নুসেইরাত এলাকায়, ২০ জুলাই ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলকে ‘এখনই যুদ্ধ থামানোর’ আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ ২৮টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের মতে, গাজায় ‘মানুষের দুর্ভোগ এক নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে’।

ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা মিত্রদের ভাষা যে ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, এই যৌথ বিবৃতি তারই সর্বশেষ উদাহরণ। আল জাজিরাসহ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ২৫ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গাজায় চলমান ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ এরই মধ্যে ২১ মাসের বেশি সময় পার হতে চলেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন এক সময়ে গতকাল সোমবার ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলো এই যৌথ বিবৃতি দিল।

বিবৃতিতে একটি সমঝোতাভিত্তিক অস্ত্রবিরতি, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অল্প অল্প করে ত্রাণ সরবরাহ এবং ত্রাণপ্রত্যাশী শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের নৃশংসভাবে হত্যার আমরা নিন্দা জানাই। এসব মানুষ তো কেবল পানি ও খাবারের মতো ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে চেয়েছিল।

জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুই মাসের বেশি সময় সম্পূর্ণ অবরোধ রাখার পর গত মে মাসের শেষের দিক থেকে ইসরায়েল তা শিথিল করে। এরপর ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, ইসরায়েল সরকারের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা বিপজ্জনক, যা অস্থিরতা বাড়াচ্ছে এবং গাজাবাসীর মানবিক মর্যাদা কেড়ে নিচ্ছে। ইসরায়েল সরকার বেসামরিক জনগণকে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা না দিয়ে যা করছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।

আরও পড়ুন

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, জাপান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড। দেশগুলোর পক্ষে তাঁদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, গত রোববার উপত্যকাটিতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ৯৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে ৮০ জনকে হত্যা করা হয়েছে উপত্যকাটির উত্তরে। নয়জন নিহত হয়েছেন দক্ষিণে রাফা এলাকার কাছে। আর চারজনকে হত্যা করা হয়েছে খান ইউনিসে।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ইসরায়েল থেকে তাদের ত্রাণবাহী ২৫টি ট্রাক গাজা নগরীর কাছে পৌঁছালে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা সেখানে ভিড় করেন। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালান। তবে, ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজা নগরীর কাছে হাজার হাজার মানুষের ভিড় তাদের কাছে হুমকি বলে মনে হয়েছিল। তাই তারা সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে।

গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষের ওপর হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেশির ভাগ হামলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রের কাছে।

আরও পড়ুন