‘সন্ত্রাসী’ তকমা কাটানোর পরদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন আল–শারা
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা তাঁর সরকারি সফরের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। সন্ত্রাসী তালিকা থেকে ওয়াশিংটন তাঁর নাম বাদ দেওয়ার এক দিন পরই তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন।
গত বছরের শেষ দিকে ইসলামপন্থী শারার নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পরে শারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।
আগামীকাল সোমবার শারা হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৪৬ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর এটি।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেতা আল–শারা গত মে মাসে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় সৌদি আরবের রিয়াদে প্রথম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া–বিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাক চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে সিরিয়াকে যুক্ত করতে শারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সিরিয়ার একটি কূটনৈতিক সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র দামেস্কের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এর লক্ষ্য মানবিক সহায়তা সমন্বয় করা এবং সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার চুক্তির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা।
গত শুক্রবার সন্ত্রাসী তালিকা থেকে শারার নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট বলেন, শারা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়াগুলো পূরণ করছে, যেমন তারা নিখোঁজ মার্কিন নাগরিকদের খুঁজে বের করা এবং যেকোনো অবশিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘বাশার আল-আসাদের পতন এবং আসাদ সরকারের ৫০ বছরের বেশি সময়ের দমন–পীড়নের অবসান হওয়ার পর সিরিয়ার নেতৃত্ব যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, সেটার স্বীকৃতি হিসেবেই আমরা এমন পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফর করেছিলেন শারা। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রথম সফর। আর এবার তিনি প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন সফর করছেন।
গত বৃহস্পতিবার শারার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ভোটাভুটি হয় এবং প্রস্তাবটি পাস হয়।
আহমেদ আল-শারা একসময় আল-কায়েদার সিরীয় শাখার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরে তাঁর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। গত জুলাইয়ে এ সংগঠনকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব তাদের সহিংস অতীত থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ সিরীয় নাগরিক ও বিদেশি শক্তির কাছে নিজেদের একটি মধ্যমপন্থী ভাবমূর্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করছে।
ধারণা করা হচ্ছে, শারা ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তহবিল চাইবেন। গত অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে বলা হয়েছে, সিরিয়াকে পুনর্গঠনে ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার তহবিলের প্রয়োজন হবে।